গৌরহরি দাস, কোচবিহার: দীর্ঘ বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা কোচবিহার (Coochbehar) রাজবাড়ি পার্কের সংস্কারের জন্য অবশেষে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করল রাজ্য সরকার। হেরিটেজ ফান্ডে এই টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার করে পার্কটির সংস্কারের কাজ শুরু হবে।
কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ির একেবারে গা লাগোয়া রয়েছে রাজবাড়ি উদ্যানটি। কেশব রোডের ধারে রাজবাড়ির দক্ষিণ দিকে বিশাল জায়গা ও ঝিল নিযে এই পার্ক। ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর পার্কটির উদ্বোধন করেছিলেন রাজ্যের তৎকালীন উপমুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পার্কটিতে শিশুদের খেলার বিভিন্ন সরঞ্জামের পাশাপাশি বসানো হয় বেশ বড় আকারের অত্যাধুনিক মিউজিক্যাল ফোয়ারা। পার্কের ঝিলে টলমলে জলে বোটিংয়ের জন্য ১২-১৪টি বোট রাখা হয়েছিল সেখানে। পার্কের ঝিলের ওপরে সুদৃশ্য দুটি অত্যাধুনিক ঝুলন্ত সেতু বানানো হয়। এছাড়া পার্কের ভেতরে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের মাঝে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুদৃশ্য বসার জায়গা করা হয়েছিল। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য পার্কটির মধ্যে একাধিক ছোট ঘরে রংবেরংয়ের নানারকম পাখি, খরগোশ, বিদেশি মুরগি, অজগর সহ বিভিন্ন প্রাণী রাখা ছিল। এছাড়া পার্কটির মাঝে পর্যটকদের নয়নাভিরামের জন্য চারদিকে খোলামেলা সুদৃশ্য নকশাওয়ালা গোল টিনের চাল দেওয়া মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচু পাকা ঘরের মতো রয়েছে। সবমিলিযে রাজবাড়ি পার্কটি কোচবিহারের সবচেয়ে সুন্দর নামকরা পার্কে পরিণত হয়ে উঠেছিল। ফলে একটা সময় এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসতেন। অভিভাবকরাও তাঁদের ছোট ছেলেমেয়েদের বিনোদনের জন্য এখানে নিয়ে আসতেন।
কিন্তু এতকিছু থাকার পরেও শুধুমাত্র সংস্কারের অভাবে পার্কটি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে বর্তমানে সেটি ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পার্কের ভেতরে থাকা দুটি ঝুলন্ত সেতু দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে। লতানো আগাছা জঙ্গল সেতু দুটিকে ঘিরে ধরেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে পড়েছে, যে কোনও মুহূর্তে সেতু দুটি ভেঙে পড়তে পারে। যে কারণে সেতু দুটিতে ভুল করে যাতে কেউ না উঠে পরে সেজন্য সেতু দুটির ঢোকার গেট তালা মেরে আটকে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
পার্কের ভেতরে থাকা অত্যাধুনিক ফোয়ারাটি নষ্ট হয়ে তাতে গাছ ও জঙ্গল গজিযে গিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও মিউজিকের তালে তালে এই ফোয়ারার রংবেরংয়ে জলরাশি দেখতে ভিড় জমাতেন পর্যটকরা। পার্কে পানীয় জলের জন্য সুদৃশ্য একটি ট্যাংক করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে জল নেই। বর্তমানে ঝিলের টলমলে জল প্রায় পুরোপুরি পানাপুকুরে পরিণত হয়েছে। ঝিলে থাকা বোটগুলিও সব প্রায় নষ্ট হযে উলটে পড়ে রয়েছে। সেগুলিতে জঙ্গল গজিযে গিয়েছে।
গোটা পার্কে খুবই সামান্য আলো জ্বলে। ফলে সূযের আলো ডুবতেই অন্ধকারে ছেয়ে যায় গোটা পার্ক। এছাড়া অজগর, খরগোশ, বিভিন্ন পশুপাখি এখন আর কোনও কিছুই নেই পার্কে। সবমিলিযে পার্কটি একেবারেই প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ বিষযে কোচবিহার হেরিটেজ কমিটির প্যাট্রন তথা কোচবিহার পুরসভার চেযারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘রাজবাড়ির পার্কটির সংস্কারের জন্য ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শীঘ্রই টেন্ডার করে পার্কের কাজ শুরু হবে।’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ
আরও পড়ুন : ৫০ বছর পর পুরোনো চেহারায় ফিরছে বক্সা ফোর্ট