অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: ক্যাঙারু পাচার, বালি মাফিয়াদের রমরমা, কয়লা পাচারের রুট হয়ে ওঠার মতো একের পর এক কাণ্ডের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার। স্বভাবতই পুলিশের উপর চাপও বেড়েছে। জেলায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে লাগাম টানতে আলিপুরদুয়ারে নতুন তিনটি থানা বানানো হবে। এব্যাপারে প্রশাসনের বড়কর্তারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তবে জেলার তিনটি ফাঁড়িকে যে থানায় উন্নীত করা হবে, তা একপ্রকার নিশ্চিত।
আলিপুরদুয়ার জেলা হয়েছে ২০১৪ সালে। তারপর দীর্ঘ ৮ বছর হয়ে গেলেও জেলায় নতুন মহকুমা, নতুন ব্লক কিংবা নতুন থানা তৈরি হয়নি। জেলার পুলিশ ও প্রশাসনিক পরিকাঠামো সংস্কারের দাবি তো রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। সেই দাবি শীঘ্রই মান্যতা পেতে চলেছে। বর্তমানে জেলায় ৮টি থানা রয়েছে। এগুলো হল- আলিপুরদুয়ার, শামুকতলা, ফালাকাটা, কুমারগ্রাম, মাদারিহাট, কালচিনি, জয়গাঁ ও বীরপাড়া। আপাতত যে তিনটি ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করা হবে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলি হল- সোনাপুর, বারবিশা ও হাসিমারা।
ওই তিনটি ফাঁড়ির পরিকাঠামো উন্নত করার প্রস্তাব জেলা পুলিশের তরফ থেকে অনেকদিন আগেই রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সম্প্রতি এটা নিয়ে আবার চর্চা শুরু হয়েছে। কয়েক মাস বাদেই জেলার অষ্টম বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। তার আগেই জেলাবাসী সরকারিভাবে এই নতুন তিনটি থানা তৈরির কথা জানতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নও ঘুরছে। যদিও এই বিষয়ে জেলা পুলিশের কর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে নারাজ। জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, এই বিষয়ে এখন আমার কিছু বলার নেই। সময়মতো সবাইকেই সবকিছু জানিয়ে দেওয়া হবে।
এসপি সরাসরি মুখ খুলতে না চাইলেও, ফাঁড়িগুলো যে থানায় উন্নীত হবে- এই বিষয়ে সরকারিভাবে না বললেও আভাস পাওয়া গিয়েছে দুই ফাঁড়ির ওসির কথায়। বারবিশা ফাঁড়ির ওসি নয়ন দাস বলেন, দেড় বছর আগে শুনেছিলাম এই তিনটি ফাঁড়ি থানা হবে। তবে সেই প্রস্তাব আপাতত কোন পর্যায়ে আছে, সেব্যাপারে তিনি কিছু বলতে চাননি। একইভাবে থানা হওয়া নিয়ে আলোচনা সংশ্লিষ্ট মহলে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন হাসিমারা ফাঁড়ির ওসি শিবাজি সিং।
জেলার যে তিনটি ফাঁড়িকে থানায় উন্নীত করার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বারবিশা ফাঁড়ি রয়েছে আলিপুরদুয়ার-অসম সীমানায়। এই সীমানা থেকে প্রায়শই গাঁজা সহ মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করার খবর আসে। সেইসঙ্গে সম্প্রতি ক্যাঙারু উদ্ধারের ঘটনায় গোটা রাজ্যে হইচই পড়ে গিয়েছিল। এছাড়া বালি-পাথর বা কয়লা পাচারের রুট হিসেবেও অনেক সময়ই এই এলাকাকে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব দুষ্কর্ম রুখতে এই এলাকায় যে পুলিশবাহিনীর লোকবল বাড়ানো ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন করা প্রযোজন, তা জেলা পুলিশের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের কর্তারাও জানেন। আপাতত এই ফাঁড়িতে দুজন এসআই এবং তিনজন এএসআই রয়েছেন।
একইভাবে হাসিমারাও গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে রয়েছে এয়ারবেস। চা বলয়ে এই এলাকায় কাঠ পাচারকারীরা সক্রিয়। সেইসঙ্গে পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যও বারবার সামনে এসেছে। হাসিমারা ফাঁড়িতেও দুজন এসআই এবং তিনজন এএসআই রয়েছেন। হাসিমারা ফাঁড়ির নতুন ভবনেই থানার কাজকর্ম চালানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের অন্তর্ভুক্ত, শহর লাগোয়া সোনাপুর ফাঁড়িও বাকি ওই দুই ফাঁড়ির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই ফাঁড়িতে তিনজন এসআই এবং তিনজন এএসআই রয়েছেন। ওই ফাঁড়ির অধীন এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালি-পাথর তোলার অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। সেইসঙ্গে ওই এলাকা দিয়ে গোরু পাচারের অভিযোগও রয়েছে। আবার একদিকে জলাদাপাড়া, আরেকদিকে চিলাপাতার মতো জঙ্গল এলাকাতেও নজরদারি চালাতে হয় এখানকার পুলিশকর্মীদেরই। এই ফাঁড়ি থানায় উন্নীত হলে এইসব কাজে আরও সুবিধা হবে বলেই চর্চা পুলিশ মহলে।
সোনাপুর ফাঁড়ির বর্তমান ভবনটি অবশ্য মহাসড়কের কাজের জন্য ভাঙা পড়বে। খুব শীঘ্রই সোনাপুরে নতুন পুলিশ ভবন তৈরি হবে। সোনাপুর এলাকার পূজারি সংঘ ক্লাব থেকে পুলিশ ভবন তৈরির জন্য জায়গা দেওয়া হবে বলে আলোচনা চলছে। কিছুদিন আগেই ওই জমি পরিদর্শন করে গিয়েছেন পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের অন্য শীর্ষকর্তারা। সোনাপুর ফাঁড়ির ওসি পিটি ভুটিয়া বলেন, নতুন পুলিশ ভবনের কাজ হবে। ওটা নিয়ে আলোচনা চলছে। নতুন যে ভবন হবে সেটি থানার পরিকাঠামো নিয়ে তৈরি করা হবে।
আরও পড়ুন : ভুটানের পাথর ভাঙার মেশিনের বিকট শব্দ অতিষ্ঠ জয়গাঁর খোকলাবস্তি