দিনহাটা : লকডাউনের জেরে থমকে গিয়েছে দিনহাটা মহকুমার তামাক ব্যবসা। জমিতে উৎপাদিত তামাক যেমন হাটে বিক্রি করতে পারছেন না তামাকচাষিরা, তেমনই তামাক ব্যবসায়ীরাও তাঁদের ঘরে থাকা তামাক ভিনরাজ্যে পাঠাতে পারছেন না। করোনার জেরে মহকুমার চাষি, ব্যবসাযী ও শ্রমিক মিলিয়ে অন্তত হাজার পঞ্চাশেক মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এই লকডাউন আরও বেশিদিন চললে দিনহাটা মহকুমার অর্থনীতি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন তামাক ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, এটা তামাকের মরশুম। এসময় কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয়। চাষিদের ঘরে টাকা ঢোকে। কিন্তু হাটই যদি না বসে তাহলে ঘরে টাকা ঢুকবে কীভাবে?
ধান, পাট, সবজি চাষের পাশাপাশি দিনহাটা মহকুমার একটি বড় অংশে তামাক চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে সিঙ্গিমারি ও ধরলা নদীর দুপারে এই তামাক চাষ হয়ে থাকে। দিনহাটার পাশাপাশি মাথাভাঙ্গা, কোচবিহার-১ ও তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের একটা অংশে এই চাষ হয়ে থাকে। এখানকার উৎপাদিত তামাক অসম, ওডিশা সহ ভিনরাজ্যে যায়। এছাড়া রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও তামাক যায়। প্রতিবছর সরস্বতীপুজোর দিন তামাক কেনা শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। মার্চ ও এপ্রিল মাসে জোরকদমে কেনাবেচা হয়। ব্যবসাযীরা দিনহাটা মহকুমার বিভিন্ন হাট থেকে তামাক কিনে সেই তামাক নিজস্ব গুদামে প্রসেসিং করেন। এরপর ভিনরাজ্যে তামাক বিক্রি করেন। মহকুমায় অন্তত ২৫-৩০ হাজার তামাকচাষি রয়েছেন। নথিভুক্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা অন্তত ৫০০। এছাড়া মিডলম্যান, শ্রমিক, ভ্যানওয়ালা মিলিয়ে আরও অন্তত ২০ হাজার মানুষ এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সপ্তাহে সাতদিনই মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় হাট বসে। একেকদিনে চার-পাঁচটি হাট বসে। একেকটি হাটে পাঁচ-ছকোটি টাকার তামাক বেচাকেনা হয়। কিন্তু লকডাউনের জেরে সেইসব হাট বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাই কেনাবেচাও বন্ধ। জমিতে উৎপাদিত তামাক চাষিদের বাড়িতেই পড়ে থাকছে। আর ব্যবসায়ীদের ঘরে যে সমস্ত তামাক মজুত রয়েছে, গাড়ি বন্ধ থাকায় সেগুলো তাঁরা পাঠাতে পারছেন না। চাষি ও ব্যবসাযীদের মাঝে যেসব মিডলম্যান রয়েছেন, তাঁরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সবমিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে তামাকশিল্প।
সিতাই ব্লকের চামটা গ্রামের তামাকচাষি যতীন বর্মন, কাজল রায় বলেন, বাড়িতে ৩০ কুইন্টাল তামাক পড়ে আছে। বিক্রি করতে পারছি না। তামাক শ্রমিক আতিয়ার রহমান, আজিজ মিয়াঁ বলেন, ১৫-২০ দিন ধরে কাজ বন্ধ। মালিক বলে দিয়েছেন করোনার ঝামেলা মিটলে তারপর কাজে আসতে। তামাক ব্যবসায়ী চিরঞ্জীব মিত্র বলেন, এটা তামাক কেনার আদর্শ সময়। কিন্তু সব হাটই বন্ধ। কাজেই তামাক যেমন কিনতে পারছি না, বাইরে তামাক পাঠাতেও পারছি না। তামাকের অন্যতম বড় হাট গোসানিমারি। সেই গোসানিমারি বাজারের এক চা দোকানের মালিক গোপাল সাহা বলেন, তামাকের মরশুমে ভোরবেলা থেকে চা বিক্রি করেই কয়েকশো টাকা রোজগার করতাম। এখন সেটা বন্ধ। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসাযী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, করোনা মোকাবিলায় লকডাউন না করে উপায় নেই। আবার লকডাউনের জেরে তামাকশিল্প চরম ক্ষতির মুখে। চাষি, মিডলম্যান ও ব্যবসাযী মিলিয়ে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। লকডাউন কবে উঠবে সেদিকেই তাকিয়ে ব্যবসায়ীরা।