শিলিগুড়ি: মায়ের সঙ্গে একদিন বসে মোবাইল দেখার সময়ই একটি ভিডিওতে এক মহিলাকে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য চুল দান করতে দেখেছিল ছোট্ট মানসী। কী জন্য মহিলা চুল দান করছেন, তা শিশুসুলভ মনে মা শেফালি ঘোষ বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসা করেছিল প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া। কেমোথেরাপি চলাকালীন কীভাবে চুল পড়ে যায়, সেই বিষয়টি মেয়েকে বুঝিয়ে বলেছিলেন শেফালিদেবী। অন্যান্যদের চুল কীভাবে ওই ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাও বলেছিলেন।
সেদিনই ছোট্ট মেয়েটি ভেবে নিয়েছিল, ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য নিজের চুল দান করবে। মেয়ের সেই কথা শুনে শেফালি দেবী ও তাঁর স্বামী বিদ্যুৎ বিশ্বাস কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু মানসীর ইচ্ছাতে অভিভাবকরা বাধা দেননি। সম্প্রতি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানসী তার চুল দান করে।
শিলিগুড়ির(Siliguri)২৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লির ১ নম্বর রাস্তার বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিশ্বাস থানা মোড় এলাকায় একটি ঘড়ির দোকান চালান। মেয়েকে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করেছেন। ক্যানসার আক্রান্তদের চুল দান করার খবর ইতিমধ্যে মানসীর স্কুলে ছড়িয়ে পড়েছে। ছোট্ট মেয়ের এই বয়সে এমন চিন্তাভাবনা প্রশংসিত হচ্ছে সর্বত্র। মানসীকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, ‘দিদিমণিরা আমাকে স্কুলে গুড বলেছে। আমার যখন আবার বড় চুল হবে তখনও সেটি আমি দেব।‘ প্রথম শ্রেণির ছাত্রীটি কথায় পটু। অঙ্ক তার সবচাইতে পছন্দের বিষয়। বড় হয়ে সে আইপিএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এবয়সে কী করে আইপিএস হওয়ার স্বপ্ন দেখলে প্রশ্ন করতেই ছোট্ট মেয়েটির জবাব, ‘মোবাইল থেকে। আইপিএস হয়ে শহরকে সুরক্ষিত করব।‘ যদিও নিজের জীবন নিযে এবয়সেই প্ল্যান বি ভেবে রেখেছে মানসী। আইপিএস যদি না হতে পারে তবে গুগল-এ চাকরি করার বিষয়টি ভাবনার মধ্যে রয়েছে। তার কথায়, ‘গুগুলে সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে। সেই কারণে সেখানে যেতে চাই।’
শেফালিদেবী মেয়েকে গৃহশিক্ষকের কাছে না দিয়ে নিজেই বাড়িতে পড়ান। সোম থেকে শুক্রবার পর্যন্ত স্কুল থাকায় মানসী সেভাবে মোবাইল দেখতে পারে না। তবে শনি ও রবিবার মেয়েকে মোবাইলে ভিডিও দেখতে দেন দম্পতি। শেফালিদেবী বলেন, ‘চুল কাটার সময় মেয়ে দারুণ খুশি ছিল। গত শুক্রবার মেয়ের চুল ইউনিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে। সকলে যদি এভাবে এগিযে আসে তাহলে ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদের জন্য এই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।‘