উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: উত্তরবঙ্গজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হল ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস। মঙ্গলবার গোটা রাজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও সাড়ম্বরে পালন করা হল প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়।

জলপাইগুড়ি জেলাতেও পালিত হল প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন জলপাইগুড়ি টাউন ক্লাব ময়দানে সকাল ৯টায় জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সঙ্গে ছিলেন পুলিশ সুপার প্রদীপ যাদব। সম্মিলিত বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন তাঁরা। বাহিনীর হর্স ফায়ার এবং কুচাকাওয়াজ, ট্যাবলো প্রদর্শন হয়। তবে অতিমারির সতর্কতায় এবার আড়ম্বর সেভাবে করা হয়নি। দর্শক সংখ্যাও ছিল সামান্যই। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ভাষনে জানান, গত বছর করোনা অতিমারির জন্য প্রশাসন ও জেলাবাসীর কাছে কঠিন সময় ছিল। এদিন জেলার কাজের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন তিনি। দুয়ারে সরকারে ৩০শতাংশ জেলাবাসী প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। চলতি আর্থিক বছরে ১০০দিনের কাজের প্রকল্পে ৩লক্ষ পরিবারকে দেড় কোটি শ্রমদিবস তৈরি করেছে। তপশিল জাতি উপজাতি সম্প্রদায়কে ৮০হাজার শংসাপত্র দেওয়া হয়েছে, জয় জোহার প্রকল্পে ৪৭হাজার মানুষ, পথশ্রী প্রকল্পে ৬৪টি নতুন রাস্তা, কন্যাশ্রী প্রকল্পে ৭৬হাজার ছাত্রছাত্রীকে আওতায় আনা হয়েছে বলে জেলাশাসক জানান।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মালদা জেলাতেও প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মালদা জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র। মালদা ডিএসএ ময়দানে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও এদিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজরিয়া সহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তা আধিকারিকেরা। কুচকাওয়াজ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় আজকের দিনটি।

এদিন সকালে রায়গঞ্জের স্টেডিয়াম ময়দানে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর দিনাজপুর জেলার জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মীনা, রায়গঞ্জের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার সহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য সকল আধিকারিক এবং রায়গঞ্জ পৌরসভার পুরপ্রধান সহ প্রায় সকল কাউন্সিলার। এদিন সকাল ৯টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মীনা। পরবর্তীতে জেলাবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন জেলাশাসক। ভাষণ দেওয়ার পর জিপে করে এসপিকে সাথে নিয়ে সমগ্র মাঠ পরিদর্শন করেন তিনি। পরবর্তীতে হর্স ফায়ার, কুচকাওয়াজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদিনের অনুষ্ঠান দেখতে কয়েক হাজার মানুষ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত হয়েছিলেন। স্টেট আর্মড পুলিশ, ডিস্ট্রিক্ট আর্মড পুলিশ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এদিন কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। কুচকাওয়াজের শেষে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ট্যাবলো মাঠ পরিভ্রমণ করে।

মঙ্গলবার মাল মহকুমাশাসক করণের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপিত হল। এবার করোনাভাইরাস প্রতিরোধের যাবতীয় নিয়মাবলী মেনেই প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য স্কুলপড়ুয়াদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বি এল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে প্রজাতন্ত্র দিবসের মহকুমা স্তরের মূল অনুষ্ঠানটি হয়েছে। সকালে মালের মহকুমাশাসক শান্তনু বালা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মহকুমা শাসক শান্তনু বালা এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রবীন থাপা কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করেন। পুলিশ এবং দমকল বাহিনী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। মহকুমাশাসক প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। মহকুমা শাসক করণ, মাল, মেটেলি ও নাগরাকাটা ব্লকের ট্যাবলো মাঠ পরিক্রমা করে। বিক্রম প্রামানিক এবং তারাশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় যথাক্রমে ভায়োলিন এবং মাউথ অর্গানের জাতীয় সঙ্গীত এবং দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। মালবাজারের নটরাজ ডান্স গ্রুপ দেশাত্মবোধক নৃত্য পরিবেশন করে। মহকুমাশাসকের করণের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত সরকার ধন্যবাদ জ্ঞাপনে বক্তব্য রাখেন।

চাঁচল মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে চাঁচল বাহাদুর শাহ জাফর স্টেডিয়াম মাঠে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস। এদিন সকালে চাঁচল মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। মহকুমাশাসক তাঁর উদ্ধোধনী বক্তব্যে প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি চাঁচল মহকুমাবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছাসহ ও মহকুমার বার্ষিক উন্নয়নমূলক কাজগুলি এদিন বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরেন। এরপর পুলিশ বাহিনী মহকুমাশাসককে প্রথা মাফিক অভিনন্দন জানান। এদিন উপস্থিত ছিলেন চাঁচল মহকুমাশাসক সঞ্জয় পাল ছাড়াও চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মন্ডল, চাঁচল থানার আইসি সুকুমার ঘোষ, চাঁচল-১ ব্লকের বিডিও সমীরণ ভট্টাচার্য্য ও দমকল সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিশিষ্ট আধিকারিকগণ, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সমাজের বিশিষ্টজন।

মহকুমাশাসকের বক্তব্যের পরে পর্যায়ক্রমে কুচকাওয়াজ প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এই প্যারেডে চাঁচল থানা পুলিশ কর্মীদের পাশাপাশি মহকুমা এলাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ক্ষুদে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। তারপর সাঁওতালি নাচ সহ রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির ট্যাবলো প্রদর্শনীও হয়। তবে এবছর স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটির ট্যাবলো নতুনরুপে দেখা গিয়েছে। যা জণগনের দৃষ্টি আকর্ষন করে। প্রতিবারের ন্যায় এবছরও অনুষ্ঠানটি ঘিরে এলাকাবাসীর সক্রিয় সহযোগিতা ও উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় চাঁচল বাহাদুর শাহ জাফর স্টেডিয়ামে। শেষে ট্যাবলো প্রদর্শনী সহ সকল প্রতিযোগীদের মেমেন্টো সহ শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয় মহকুমাশাসক সঞ্জয় পালের তরফে।

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বীরপাড়া জুবলি ক্লাবের উদ্যোগে মঙ্গলবার ম্যারাথন দৌড় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিক উদবোধন করেন ক্লাব সভাপতি গৌতম ঘোষ। তাসাটি চাবাগানের ফুটবল মাঠ থেকে ৬কিলোমিটার বীরপাড়া জুবলি ক্লাবের মাঠ পর্যন্ত ওই দৌড়ে ২০০জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। প্রথম হয়েছে মানম লামা, দ্বিতীয় মঞ্জিত লামা ও তৃতীয় হয়েছে পারবল ওরাওঁ। তাঁদের হাতে মানপত্র ও আর্থিক পুরষ্কার করা হয়। এছাড়াও ১০জন প্রতিযোগীকে মেমেন্ট দেওয়া হয় বলে ক্লাব সভাপতি গৌতম ঘোষ জানান।