বর্ধমানঃ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের এক শ্রমিক দম্পতিকে। রেহাই পায়নি তাঁদের দেড়বছর বয়সী শিশু পুত্রও। প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শিশু পুত্র আদিকে সঙ্গে নিয়েই বেঙ্গালুরুর জেলে দিন কাটাচ্ছেন অসহায় দম্পতি পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। এক ঘটনা সংক্রান্ত খবর গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত হয় উত্তরবঙ্গ সংবাদে। বিভিন্ন মহল থেকে চাপ সৃষ্টি হয় বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশের ওপর। বিপাকে পরে পুলিশ এ রাজ্যে এসে প্রশাসনিক দপ্তরে ঘুরে নথি সংগ্রহ করে নিশ্চিৎ হতে চাইছেন, বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি থাকা দম্পতি আদৌ কি বাংলাদেশি! নাকি তারা প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক। এমনটা জেনে অধিকারী পরিবার আশায় বুক বেঁধেছেন জেল থেকে সপুত্র দম্পতি জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা দম্পতি পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। ভাল রোজগারের আশায় তাঁরা শিশুপুত্রকে নিয়ে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে। একই উদ্দেশ্য পলাশের বাবা বাবা পঙ্কজ অধিকারী এবং মা সবিতাদেবীও বেঙ্গালুরু যান। সেখানকার মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলে গ্রামের কায়েন খাঁনের ডেরায় তারা ওঠেন। সেখানে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরিরর শর্তে তারা কায়েন খাঁনের অধীনে কাজ করা শুরু করেন।
সেখানে সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। হঠাৎ করেই গত ২৭ জুলাই ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খাঁনের ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা যাঁরা বাংলাভাষী ছিল তাঁদের প্রত্যেককে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভারথুর থানায় আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। ওইসময়ে পলাশ ও তাঁর পরিবারের লোকেরা নিজেদেরকে ভারতীয় বলে জানিয়ে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড দেখান পুলিশকে। সেইসব দেখে সেখানকার ভারথুর থানার পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা-মাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু পলাশ এবং তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র সহ সাত জনকে আটকে রাখে। তাদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়ে দেয়। সেই থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে শিশুপুত্র আদিকে সঙ্গে নিয়েই বেঙ্গালুরুর জেলে চোখের জল ফেলেই দিন কাটাচ্ছে পলাশ ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা। ছেলে, বৌমা ও নাতি কে জেলথেকে মুক্ত করার জন্য পলাশের বাবা ও মা বেঙ্গালুরুতে থেকে নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সুরাহার কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় তাঁরাও যথেষ্ট হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকা সহ পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ভারথুর থানার পুলিশ যে একটু নড়ে চড়ে বসেছে। ভারথুর থানার পুলিশের একটি দল পূর্ব বর্ধমানে এসেছেন ঘটনার তদন্তে। জামালপুরের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, “উত্তরবঙ্গ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে প্রথম জানতে পারি আমার ব্লকের তেলে গ্রামের বাসিন্দা এক দম্পতিকে ফরেনার্স অ্যাক্টে গ্রেপ্তার করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁরা সেখানকার জলে প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে বন্দি হয়ে রয়েছে। তিন চারদিন আগে বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার তিন পুলিশ আধিকারিক তদন্তের স্বার্থে তাঁর কাছে আসে। পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক কিনা এবং ভোটার ও আধার কার্ডটি সঠিক কিনা সেইসব বিষয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাঁর কাছে জানতে চায়। এছাড়াও পলাশদের পারিবারিক পরিচিতি, কতদিন তারা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন, তাদের কাস্ট স্টেটাস সহ নানা বিষয়ে জানতে চায়। এইসব বিষয়ের তথ্যও যাচাই করে। সব তথ্য ভারথুর থারার মেইল আইডি তে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে বিডিও জানান। পাশাপাশি তিনি এও বলেন দম্পতি যে জৌগ্রামের তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা সেই বিষয়ে জামালপুর থানার পুলিশও রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুনঃ কামড় কাণ্ডে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ কলকাতা পুলিশের, অরুণিমা চাইছেন অভিযুক্তের শাস্তি