ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা: ছোটবেলা থেকেই ভালো দৌড়োতে পারতেন অনাথচন্দ্র বৈরাগি। ভেবেছিলেন দৌড়ের মাধ্যমেই একদিন জীবন ঘুরে যাবে। জুটবে চাকরি, সুখে-শান্তিতে করবেন সংসার। কিন্তু স্বপ্নগুলি স্বপ্নই থেকে গিয়েছে। তা বাস্তবের আলো দেখেনি। ভুরিভুরি পুরস্কার আজ ভাঙাচোরা আলমারিতে বন্দি। আর জাতীয়স্তরের দৌড়বিদ অনাথচন্দ্র এখন নাইট গার্ডের কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালাচ্ছেন। অবশ্য এখনও খেলাধুলা ছাড়েননি। ফালাকাটা শহরে নিয়মিত কোচিং করান বছর পঞ্চাশের অনাথচন্দ্র বৈরাগি। রাজ্য ও জাতীয়স্তরের একাধিক পুরস্কার অনাথবাবুর ঝুলিতে থাকলেও জোটেনি সরকারি চাকরি। এমনকি এখনও পর্যন্ত কোনও সাহায্যও পাননি। সারাদিন কোচিং করিয়ে রাতে ফের নাইট গার্ডের কাজ। চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট, তারপরও জীবন সংগ্রামের দৌড় চালিয়ে যেতে চান অনাথচন্দ্র। তিনি বলেন, ‘স্কুল ও কলেজস্তরের অ্যাথলেটিক্স মিটে বহুবার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কলকাতার ক্লাবের হয়ে জাতীয়স্তরেও খেলেছি। অনেকেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সামান্য সাহায্যটুকুও পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে নাইট গার্ডের কাজ করছি। সঙ্গে বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। এখন ওদের মধ্যেই আমার স্বপ্নগুলিকে দেখতে পাই।‘
অনাথচন্দ্র বৈরাগির বাড়ি ফালাকাটা শহর সংলগ্ন সিঙ্গিজানি গ্রামে। সেখানে একটি ভাঙাচোরা ঘরে তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন। আর ফালাকাটা শহরে থেকে তিনি অ্যাথলেটিক্সের কোচিং করানোর পাশাপাশি নাইট গার্ডের কাজ করেন। মানুষের বিপদেও পাশে দাঁড়ান অনাথচন্দ্র। ২০০৪ সালে কোচবিহারের এক ব্যক্তির মেয়েকে নিজের একটি কিডনি দান করেছিলেন। যদিও সেজন্য তিনি কোনও অর্থও নেননি। একটি কিডনি নিয়েই রোজ ২৫ কিলোমিটার সাইকেল চালান। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দেন।
ফালাকাটার ফুটবল কোচ রুহুল আমিন বলেন, ‘অনাথবাবু আমাদের গর্ব। সরকার উদ্যোগী হয়ে অনাথবাবুকে কোচ হিসেবে নিয়োগ করলে এলাকায় অ্যাথলেটিক্সে জোয়ার আসতে পারে।’ অন্যদিকে, নিজের অপূর্ণ স্বপ্নগুলিকে ছাত্রদের মাধ্যমে পূরণের দৌড় জারি রাখবেন বলে জানান অনাথবাবু।
আরও পড়ুন : দিনহাটা-কোচবিহার মেইনরোডের ডিভাইডার সংস্কারে উদ্যোগী পূর্ত দপ্তর