গাজোল: তীব্র দাবদাহে পুড়ছে গৌড়বঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। তাপমাত্রার পারদ পৌঁছে গেছে চল্লিশ ডিগ্রিতে। আবহাওয়াবিদদের মতে এই তাপমাত্রা আগামী সপ্তাহে ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা আমজনতার। গরম থেকে বাঁচতে কেউবা খাচ্ছে ডাবের জল, আখের রস, টক দই, নানা ধরনের ঠান্ডা পানীয় এবং অতি অবশ্যই বেশি পরিমাণে খাচ্ছেন জল। কিন্তু বেচারা জীবজন্তুরা কি করবে?। দাবদাহের হাত থেকে বাঁচার জন্য পরিপাটি করে খাবার দাবার সাজিয়ে দেওয়ার মত কেউ নেই তাদের।তবে এদিক থেকে বলতে গেলে অনেকটাই ভাগ্যবান আদিনা মৃগদাবের হরিণ এবং নীলগাইরা। প্রচন্ড গরমের হাত থেকে হরিণ এবং নীলগাইদের বাঁচাতে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে বনদপ্তর। ফরেস্ট এর সুপারভাইজার ইন্দ্রজিৎ দাসের নেতৃত্বে বন কর্মীরা তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন এই সমস্ত পশুদের উপরে। হরিণ এবং নীলগাইদের যত্নআত্তি করেন সুফল মার্ডি, জ্যাঠা সরেন, মিঠুন সরেন, শ্রীমন্ত চৌধুরী, তরণী মন্ডলের মতো এক ঝাঁক বনকর্মী।
সুপারভাইজার ইন্দ্রজিৎ দাস জানালেন, তীব্র তাপপ্রবাহে হরিণ এবং নীলগাইরা যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়ে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে।পানীয় হিসেবে দেওয়া হচ্ছে গ্লুকোজ এবং ওআরএস। সকালবেলা খাওয়ার হিসেবে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের দানাশস্য। আগের দিন রাতেই এগুলোকে ভিজিয়ে রাখা হয়। সকালবেলা তাতে মেশানো হয় লবণ এবং নির্দিষ্ট দিনে পরিমাণ মতো ওষুধ। বর্তমানে হরিণদের সকালের খাওয়ার দেওয়ার সময় বেশ কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। দুপুরে দেওয়া হচ্ছে লিপিয়ার প্রজাতির ঘাস। এই ঘাসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। বিকেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের ডালপালা। এগুলো বাদেও যেহেতু যজ্ঞ ডুমুর এবং সজনে খেতে ভালবাসে হরিণেরা তাই তাদের মুখের স্বাদ বদলানোর জন্য এগুলো দেওয়া হয়। তাছাড়া নিয়মিতভাবে প্রাণী চিকিৎসক এসে হরিণ এবং নীলগাইদের পরীক্ষা করেন। এনক্লোজার এর ভেতরে যে পুকুর রয়েছে অনেক সময় সেই পুকুরের জল পান করে হরিণেরা। সেই পুকুরে স্নানও করে। ওই সমস্ত পুকুরের জল যাতে দূষিত না হয় তার জন্য নিয়মিত ভাবে জল পরীক্ষা করা হয়। জল দূষণমুক্ত এবং ভালো রাখার জন্য যা করা দরকার সমস্ত কিছুই করা হয়। যেহেতু এনক্লোজার এর ভেতরে প্রচুর গাছপালা রয়েছে তাই রোদের হাত থেকে বাঁচতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় পেতে কোন অসুবিধা হয় না হরিণদের। প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে এখানকার হরিণ এবং নীলগাইরা। এছাড়াও এখানে খাঁচার মধ্যে যে সমস্ত পাখি রয়েছে তাদের জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আদিনা ফরেস্টের ভেতরে যে সমস্ত পশু পাখি রয়েছে তারা যাতে গরমে কষ্ট না পায় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বনদপ্তর।