মিঠুন হালদার, রঘুনাথগঞ্জ : জঙ্গিপুর পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হতেই রঘুনাথগঞ্জ শহর ও তার আশেপাশের এলাকায় একাধিক জলাশয় বেআইনিভাবে বুজিয়ে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশ্যে পুকুর ভরাটের কাজ চললেও ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং পুরসভা চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে বলেও অভিযোগ। স্থানীয়দের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন কোনও জলাশয় ভরাট করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেও মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে এই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। জঙ্গিপুর পুরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক হিসাবে মোজাহারুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পরই একাধিক জায়গা থেকে বেআইনিভাবে জলাভূমি ভরাটের খবর আসছে।
কয়েকদিন ধরে জঙ্গিপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুবাজার বিলাত মোড় সংলগ্ন এলাকায় একটি বড় পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, দিনের বেলা ট্র্যাক্টর ও ভ্যান করে মাটি ও রাবিশ ফেলে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। অথচ পুরসভা কিংবা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের লোকজন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। নাম না প্রকাশ করার শর্তে এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিলাত মোড় সংলগ্ন এলাকার এই পুকুরটি এলাকার জলনিকাশির একমাত্র জায়গা। সম্প্রতি এক প্রোমোটার ওই পুকুরটি কিনে নেন। তারপরই বেআইনিভাবে পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। যেভাবে পুকুরটিতে মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে তাতে আগামীদিনে অল্প বৃষ্টিতেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে। যে প্রোমোটার পুকুর ভরাট করছেন, তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের খুব ভালো যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ জানালে আমাদের জীবন সংশয় হতে পারে। কিন্তু যেভাবে পুকুর ভরাট হচ্ছে তাতে এলাকায় জল জমার সমস্যা যেমন বাড়বে, তেমনই এর জন্য ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বাড়বে। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে মৌখিক অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
দিনের আলোয় পুকুর ভরাটের কাজ চললেও বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি বলে জানিয়েছেন জঙ্গিপুর পুরসভার প্রশাসক মোজাহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি জেনেছি। পুরসভার আধিকারিকদের ওই এলাকায় পাঠাচ্ছি। বেআইনিভাবে পুকুর ভরাট আমরা বরদাস্ত করব না। বিষয়টি রঘুনাথগঞ্জ-১ বিএলএলআরও-কে জানানো হচ্ছে। এদিকে ওই পুকুরের এক মালিক জানান, আমি পুকুর ভরাট করছি না। শুধুমাত্র রাস্তার জন্য সামান্য অংশে মাটি ফেলছি। তবে তিনি এলাকবাসীর সুবিধার জন্য পুকুরের অল্প অংশ বুজিয়ে রাস্তা তৈরির দাবি করলেও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ ফুট পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই দাবির সত্যতা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ পুকুর ভরাট বন্ধের দাবি জানালেও আতঙ্কে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
এব্যাপারে এসডিএলএলআরও (জঙ্গিপুর) বিনয়কুমার বিশ্বাস বলেন, এভাবে জলাভূমি বা পুকুর ভরাট করা যায় না। আমি রঘুনাথগঞ্জ-১ বিএলএলআরওকে দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার জন্য বলেছি। রঘুনাথগঞ্জ-১ বিএলএলআরও রণেন মণ্ডল বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমার অফিসাররা ঘটনাস্থলে যাবেন।