পুরাতন মালদা : করোনা সংক্রমণের জেরে আগাম সতর্কতা হিসাবে পুরাতন মালদায় আলাদা শ্মশান ও কবরস্থানের খোঁজ শুরু করল প্রশাসন। ব্লকের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে একটি করে কবরস্থান ও শ্মশান তৈরির জন্য জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হলে, যাতে সেই সব মৃতদেহ পৃথক শ্মশান বা কবরস্থানে সৎকার করা হয়, সেজন্যই এমন আগাম প্রস্তুতি বলে জানা গিয়েছে।
সারা দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। পশ্চিমবঙ্গেও বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। রাজ্যে করোনার জেরে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের দেহ কীভাবে কোথায় সৎকার করা হবে, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। শবদেহ সৎকারের সময় যাতে কোনওভাবে সংক্রমণ না ছড়ায়, তা নিয়ে তৎপরতা শুরু হয় প্রশাসনের। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে মৃত মহিলার শবদেহ সৎকার করা নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে প্রশাসন। এবার রাজ্যের জেলায় জেলায় এই নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে বলে খবর। মঙ্গলবার এই বিষয়ে পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে বৈঠক করে পুরাতন মালদা ব্লক প্রশাসন। ব্লকের কমিউনিটি হলে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিডিও ইরফান হাবিব, মালদা থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা, মঙ্গলবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি হারেজ আলি প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ব্লকের ছটি পঞ্চায়েতের প্রধান ও পুরাতন মালদা পুরসভার প্রতিনিধি।
ওই বৈঠকে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আলাদা শ্মশান ও কবরস্থান চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শ্মশান ও কবরস্থান তৈরির জন্য জনবসতি থেকে নিরাপদ দূরত্বে কোনও জায়গা খোঁজার কথা বলা হয়েছে। যদি সংক্রমণ মাথাচাড়া দেয় এবং তার ফলে যদি কারও মৃত্যু হয়, তবে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্মশান বা কবরস্থানে সৎকার করতে হবে। যদিও এখনও জেলা তথা রাজ্যে তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তবুও আগাম সতর্কতা হিসাবে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পুরাতন মালদার ছটি পঞ্চায়েত প্রশাসনকে জমি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত পঞ্চায়েত প্রধানরা এমন প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে জমি খোঁজার কাজ শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, বিশ্বের তাবড় দেশগুলি করোনা মোকাবিলায় যে সংকটের সামনে দাঁড়িয়েছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্তরকম প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার। আমরা আন্তরিকভাবে চাই যাতে সংকট চরমে না ওঠে। কিন্তু কেউ যদি করোনার সংক্রমণে মারা যান, তবে আর পাঁচটা শবদেহের মতো তার সৎকার করা উচিত নয়। সেই সব শবদেহ সৎকারের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা উচিত। সেকারণেই পৃথক কবর ও শ্মশানের প্রযোজন আছে। গ্রামে অসুস্থ ব্যক্তিদের সম্পর্কে পঞ্চায়েত প্রধানদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্থায়ী শ্মশান ও কবরস্থানগুলি ব্যবহার করা হলেও করোনা আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হলে পৃথক শ্মশান ও কবরস্থানেই সৎকার করতে হবে শবদেহগুলিকে।
এদিকে, এদিনের বৈঠকে সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধানদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভিনরাজ্য বা বিদেশ থেকে কেউ ফিরলে তা সঙ্গে সঙ্গে ব্লক প্রশাসনকে জানাতে হবে। সেই সব ব্যক্তিদের সরকারি কোয়ারান্টিন সেন্টারে আনতে হবে। এখন থেকে বিদেশ বা ভিনরাজ্য ফেরত সকলকেই বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারান্টিন সেন্টারে থাকতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখবেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এদের মধ্যে যাদের সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেবে, তাঁদের আইসোলেশনে রাখা হবে। আইসোলেশনের জন্যেও কয়েকটি নার্সিংহোমকে চিহ্নিত করা হয়েছে।