হায়দরাবাদ : ঠিক ২৮ বছর আগে কমনওয়েলথ গেমসে ব্যাডমিন্টন দল পাঠায়নি ভারত। সেই ঘটনার তিন দশকের মধ্যে ব্যাডমিন্টনের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ হিসেবে পরিচিত থমাস কাপে চ্যাম্পিয়ন এদেশের শাটলাররা।
১৯৯৪ কমনওয়েলথ গেমসের সময় ভারতীয় ক্রীড়াকর্তারা মনে করছিলেন, পদক জয়ের ধারেকাছে আসতে পারবেন না এদেশের শাটলাররা। সেসময় গেমসে বড় দল বলতে মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা কানাডার মতো দেশের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না ভারতের। সেসময় জাতীয় দলের মুখ ছিলেন পুল্লেলা গোপিচাঁদ। দল না পাঠানোর সিদ্ধাম্তে হতাশ হলেও বাস্তব চিত্রকে মেনে নিয়েছিলেন তিনি।
মেনে নিয়েছিলেন বলেই সেই ছবি বদলাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন ২০০১ অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন। ২০০৩ সালে নিজের অ্যাকাডেমি শুরু করে ভারতীয় শাটলারদের বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। পাশাপাশি তাঁদের প্রতিভা প্রকাশের মঞ্চ হিসেবে এদেশে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের ক্ষেত্রেও ভমিকা ছিল গোপির। মহাভারতে দ্রোনাচার্যের হাতে তৈরি হয়েছিল অর্জুন, ভীম, সহদেব বা দুর্যোধনের মতো কুশলী যোদ্ধারা। এই ভারতে গাচ্চিবোলির ওই অ্যাকাডেমি থেকে উঠে এসেছেন পিভি সিন্ধু, সাইনা নেহওয়াল, কীদাম্বি শ্রীকান্ত, এইচএস প্রণয়, পারুপল্লি কাশ্যপ, সাই প্রণীথরা।
এবার পরবর্তী লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেছেন গোপি। তবে তা অলিম্পিকে সোনা বা অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপ নয়। তাঁর কথায়, সিঙ্গলস হোক বা ডাবলস, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের প্রতিটি ক্যাটেগোরির প্রথম ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জন ভারতীয়কে দেখাই আমার লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে খেতাব জয় নিয়মিত ঘটনা হবে। যেমন এবার ব্যাঙ্ককে মেয়েরা একেবারেই ব্যর্থ। কিন্তু তা নিয়ে কেউ ভাবছে না। কারণ ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। আবার অলিম্পিকে ছেলেদের কোনও সাফল্যই নেই। কিন্তু মেয়েদের দাপটের কারণে সেটা নিয়ে কোনও আলোচনা হয় না। ফলে শীর্ষস্তরে শাটলারের সংখ্যা বাড়লে খেতাব জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
এই লক্ষ্য পূরণে কাজও শুরু করে দিয়েছে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন। ইতিমধ্যেই আরও ৩০ জন কোচ নিয়োগ করার পাশাপাশি উন্নয়নের জন্য গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে গোপিকে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ও অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, সরকার আমাদের ওপর ভরসা রেখেছে। যেমন প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা আযোজনের জন্য সাই প্রতি বছর ২৫ কোটি টাকা খরচা করে। আবার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতির কাছে কিছু চাইলে না শুনতে হয়নি। আমাদের আরও কোচ দরকার। সভাপতি ৩০ জনকে নিয়োগ করেছেন রবিবারই। এই কোচেরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করবেন।
২৮ বছর আগে সরকারের সিদ্ধান্তের ফল চার বছর পর পাওয়া গিয়েছিল বলে মনে করেন গোপি। ১৯৯৮ সালে দলগত বিভাগে রুপো জেতে ভারত। এবার থমাস কাপ জয়ের রেশ ধরে রেখে নতুন সাফল্য পাওয়ায় লক্ষ্য ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের দ্রোনাচার্যের।