ভাস্কর শর্মা, আলিপুরদুয়ার : গত মার্চের মধ্যে আলিপুরদুয়ার পুরসভায় সব শৌচালয় তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল। রাজ্য থেকে এমন নির্দেশ পাওয়ার পরই উদ্যোগও নেয় আলিপুরদুয়ার পুরসভা। কিন্তু লকডাউনের জন্য সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পুরসভা ব্যর্থ হয়েছে। করোনার জন্য যখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে, তখন আলিপুরদুয়ার পুর এলাকায় সাধারণ মানুষের শৌচালয় না থাকার জন্য স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের নির্দেশ পাওয়ার পরই পুরসভা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ওয়ার্ডে শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু করতে উদ্যোগ নিলেও তা আর এগোয়নি। ফলে এখনও কয়েক হাজার পুরবাসী ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী শৌচালয় তৈরি করে ব্যবহার করেন। আলিপুরদুয়ার পুরসভার প্রশাসক শ্রীরাজেশ বলেন, লকডাউনের জন্য এখন জরুরি ছাড়া সব কাজ বন্ধ। পরবর্তী নির্দেশ আসার পর বিষয়গুলি নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।
আলিপুরদুয়ার পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবর্ষে স্বচ্ছ ভারত মিশন ও মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে আলিপুরদুয়ার পুরসভায় ব্যক্তিগত শৌচালয় নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। কমিউনিটি শৌচালয় তৈরির জন্য দুকোটি টাকা এবং পাবলিক শৌচালয় তৈরির জন্য ৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। অভিযোগ, এত টাকা পাওয়ার পরও শৌচালয় তৈরি করতে পুরসভা তেমন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। এই দুবছরে মাত্র ৮৭ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত শৌচালয় তৈরি করেছে পুরসভা। আর ৬২ লক্ষ টাকার কমিউনিটি শৌচালয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বাকি টাকা এতদিন পড়ে ছিল। কিন্তু গত ফেব্রুযারি মাসে রাজ্য সরকার জানিয়ে দেয়, মার্চ মাসের মধ্যেই পড়ে থাকা টাকায় শৌচালয় তৈরি করতে হবে। এরপরই দ্রুত উপভোক্তাদের বাড়িতে ও কমিউনিটি শৌচালয় তৈরি করতে পুরসভা উদ্যোগ নেয়। জানা গিয়েছে, পড়ে থাকা বকেয়া টাকা দিযে শহরে ২,২৫০টি ব্যক্তিগত শৌচালয় এবং ৪৬টি কমিউনিটি শৌচালয় তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু মার্চ মাসের মধ্যে ওই কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওযা হলেও লকডাউনের জন্য সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
আলিপুরদুযার পুরসভায ২০টি ওয়ার্ড আছে। এখানে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করলেও প্রায় আড়াই হাজার বাড়িতে শৌচালয় নেই। চারমাস আগে পুরসভা কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করার পর এই তথ্য সামনে আসে। পুরসভা এলাকায প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই এমন বাড়ি রয়েছে, যেখানে এখনও শৌচালয় তৈরি হয়নি। তাই এলাকার বাসিন্দারা কখনও পাশের বাড়ি, কখনও নদীর পাড়, আবার অনেকে ঝোপঝাড়ে শৌচকর্ম করেন। আবার অনেকে ত্রিপল দিয়ে অস্থাযী শৌচালয তৈরি করেছেন। পুরসভার যেসব ওযার্ডে শৌচালয় নেই, তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ১১ ও ১৫ নম্বর ওযার্ডে। এখানে প্রায় পাঁচশো বাড়িতে শৌচালয় নেই।
স্থানীয বাসিন্দা তমাল দে বলেন, শৌচাগারের জন্য অনেকদিন আগে পুরসভার কাছে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এখনও ওই শৌচাগার পাইনি। গীতা সরকার বলেন, বাড়িতে পাকা শৌচালয় নেই। তাই ত্রিপল দিয়ে শৌচালয় বানিয়েছি। শহরের ৩, ৪, ৬, ৮ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বহু বাড়িতে শৌচালয় নেই। এই ওয়ার্ডগুলির প্রায ২০০টি পরিবারে শৌচালয় নেই। পুরসভার হিসেবে বলছে, ২০টি ওয়ার্ডে প্রায় আড়াই হাজার বাড়িতে শৌচালয় নেই। এখন প্রতিদিন প্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর লকডাউন। তাই কবে শৌচালয় তৈরি হয়, তা নিয়ে বাসিন্দারা উদ্বিগ্ন।