শুভঙ্কর চক্রবর্তী দিনহাটা : লকডাউনের মধ্যে নিয়ম না মেনে নদীঘাট নিলামের অভিযোগ উঠল দিনহাটা-১ ব্লকের দরিবশে। নিয়ম অনুসারে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে ঘাট নিলামের জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া, এলাকায় মাইকযোগে প্রচার-কিছুই করা হয়নি বলে অভিযোগ। এমনকি নিলামের ব্যাপারে গিতালদহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরাও কিছু জানেন না। ওই ঘাটের আগের ইজারাদারের অভিযোগ, লকডাউনের সুযোগে নিজেদের পছন্দের লোককে ইজারা পাইয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা। নিলাম নিয়ে কার্যত একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়েছেন বিডিও ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। পুরো ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত দিনহাটা-১ পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিজেপি।
গিতালদহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জারিধরলা এবং দরিবশ গ্রামের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে ধরলা নদী। বাংলাদেশ ঘেরা দুই গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। দরিবশ ঘাট এলাকায় কাশেম ঘাট নামেই পরিচিত। দিনহাটা-১ পঞ্চায়েত সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন ওই ঘাট প্রতি আর্থিক বছরের জন্য নিলাম করা হয়। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন হাট বা নদীঘাট নিলামের জন্য চিরাচরিত গণনিলাম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সেক্ষেত্রে যে এলাকার হাট বা ঘাট নিলাম করা হবে সেই এলাকায় মাইকিং করে সর্বসাধারণকে জানাতে হবে। এছাড়া প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তারপর নির্দিষ্ট দিনে সকলের উপস্থিতিতে নিলামের ডাক হবে। যিনি সবথেকে বেশি টাকা দিতে রাজি হবেন, তাঁকে এক বছরের চুক্তিতে ইজারাদার হিসেবে নিযুক্ত করবে ব্লক প্রশাসন। গত আর্থিক বছরে ঘাটের ইজারা পেয়েছিলেন দরিবশের বাসিন্দা আনসার আলি। ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় ঘাটের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। ২৩ এপ্রিল নতুন নিলাম হয়। তাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা রশিদুল হক ইজারা পান। ১ লক্ষ ৩ হাজার টাকায় তিনি ইজারা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। আনসার আলি বলেন, আমাকে কোনও চিঠি পাঠানো হয়নি। বেআইনিভাবে কাগজে-কলমে নিলাম দেখিয়ে ব্লক প্রশাসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা তাঁদের পছন্দের লোককে ইজারা পাইয়ে দিয়েছেন। য়েখানে সবাই ঘরবন্দি সেখানে কীভাবে গণনিলাম হল, তা জানি না। আমি আইনের দ্বারস্থ হব।
নিলাম নিয়ে দুরকম কথা বলেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিজুল হক এবং বিডিও শৌভিক চন্দ। প্রথমে সভাপতি জানান, কোনও নিলাম হয়নি। আর যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা বিডিও জানেন। পরে ফোন করে মফিজুল জানান, ২৩ এপ্রিল নিলাম হয়েছে। কিন্তু পদ্ধতি মেনে কেন নিলাম হল না সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি তিনি। বিডিও আবার জানান, যা করার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করেছেন। শৌভিকবাবু জানিয়েছেন, ইজারা নেওয়ার জন্য মুখবন্ধ খামে একটি মাত্র আবেদন জমা পড়েছিল। যিনি আবেদন করেছিলেন তাঁকে ইজারা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিলাম আর মুখবন্ধ খামে দরপত্র আহ্বান- দুটো এক জিনিস নয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের একাধিক পদস্থ আধিকারিক। যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দাবি, কোনও দরপত্র আহ্বান হয়নি। চিরাচরিত প্রথা মেনে ঘাট নিলাম করা হয়েছে। তাঁদের দপ্তরে নিলাম নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন গিতালদহ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনসুর আলি। তিনি বলেন, ঘাটের নিলাম নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। কোন অদ্ভুত নিয়মে নিলাম হল তা বুঝতে পারলাম না। নতুন ইজারাদার রশিদুল হকের বাবা আশরাফ আলি বলেন, কোনও অনিয়মের ব্যাপার নেই। এখন থেকে আমরাই ঘাট পরিচালনা করব। বিজেপির জেলা নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, নিলাম নিয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে আমরা আদালতে যাব। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, আমরা ত্রাণ বিলি নিয়ে ব্যস্ত। এই সময় কীভাবে, কখন ঘাট নিলাম হল জানা নেই। নিয়ম মেনে নিলাম করা হয়েছে কি না তা বিডিওকে পরিষ্কার করে বলতে হবে।