রাজগঞ্জঃ ১৪৪ ধারা জারি সত্বেও অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে রাজগঞ্জের হরিহর আশ্রমের সম্পত্তি। কয়েকদিন থেকেই আশ্রমের বাঁশ কেটে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে এলাকার মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযুক্তদের দাবি আশ্রমের বিদ্যুতের বকেয়া বিল মেটানোর জন্য বাঁশ বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগকারীর বক্তব্য, যারা বাঁশ কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা আশ্রমের কেউ না। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাঝিয়ালী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ও পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। রাজগঞ্জ(Rajganj) থানার পুলিশ জানিয়েছে, আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই কপি থানায় পৌঁছায়নি। এছাড়া আশ্রমটি ও অভিযুক্তরা নিউ জলপাইগুড়ি থানা এলাকার অন্তর্গত। তাই ওই নির্দেশের কপি সংশোধন করে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষকে।
রাজগঞ্জের মনুয়াগঞ্জ এলাকায় হরিহর মিশন ট্রাস্ট বা হরিহর নিরাশ্রয় সেবাশ্রম। আশ্রমের কর্ণধার ছিলেন যোগীরাজ হরিহরানন্দ। জানা গিয়েছে, আনুমানিক ১৯৫০ সাল নাগাদ যোগীরাজ হরিহরানন্দ আশ্রমটি গড়ে তোলেন। শতাধিক বিঘা জমি নিয়ে হরিহর অনাথ আশ্রম। তারমধ্যে চা বাগান, কৃষিজমি, গাছ ও বাঁশঝাড় রয়েছে। হরিহরানন্দজীর ইন্দোর, মহারাষ্ট্র, কালিম্পং ও শিলিগুড়িতে আশ্রম থাকায় তিনি সবসময় ব্যস্ত থাকতেন। পরবর্তীতে তিনি আশ্রমের ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। শতাধিক বছর বয়সে ২০১৫ সালে ইন্দোরের আশ্রমের তিনি মারা যান। তারপর থেকে কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে এই হরিহর আশ্রম। আশ্রমের সেবায়েত গোপাল গোস্বামী ও তার মা সীতা দাম এবং আশ্রম রক্ষার দায়িত্বে থাকা দেবব্রত মজুমদারের অভিযোগ, এলাকার কয়েকজন বেশ কয়েক বিঘা জমি অবৈধভাবে হস্তান্তর করেছে। আরও জমি দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। আশ্রমের সম্পত্তি রক্ষার জন্য কয়েকবার আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
গত মাসে ৮ জনের নামে আমবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষয়টি জানানো হয়েছে জলপাইগুড়ির সাংসদ ডা: জয়ন্তকুমার রায়কেও। তাসত্ত্বেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। আশ্রমটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সীতা দামের কথায়, নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি শুনতে হচ্ছে। আশ্রমে প্রচুর বাঁশের ঝাড় রয়েছে। সেখান থেকে গত তিনদিনে প্রায় ২০০ বাঁশ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে। এই ঘটনায় এলাকার বাসিন্দা বসন্ত রায়, সুভাষ চক্রবর্তী, দিলীপ বাগ ও মহম্মদ মোস্তফার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ২৯ জুলাই আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও অভিযুক্তদের কোনও হেলদোল নেই।
অভিযুক্তদের পক্ষে সুভাষ চক্রবর্তীর দাবি, আশ্রমের প্রায় ৩১০০০ টাকা বিদ্যুতের বিল বাকি থাকায় কয়েক মাস থেকে বিদ্যুৎ নেই। আশ্রম কমিটির সভাপতি হিসেবে উদ্যোগ নিয়ে কমিটির সম্মতিতে ওই বিদ্যুৎ বিল মেটানোর জন্য বাঁশ বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া ১৪৪ ধারা জারির ব্যাপারে তারা কোনও নোটিশ পাননি। যদিও আশ্রমের সেবায়েত গোপাল গোস্বামীর অভিযোগ, ওই কমিটি অবৈধ। তাই আশ্রমের বিদ্যুৎ বিল মেটানো সহ কোনও ব্যাপারে অভিযুক্তদের এক্তিয়ার নেই।