পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি : করোনা নিয়ে তৃণমূলস্তরে কর্মরত আশাকর্মীদের জন্য রাজ্যজুড়ে আগামী তিনমাসের জন্য সাম্মানিক ভাতা বরাদ্দ করল রাজ্য। এমনকি নতুন আশাকর্মীদের জন্যেও চারমাসের জন্য সাম্মানিক ভাতা বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্যে ২৬টি জেলায় মোট ৫৩ হাজার ৬৯ জন আশাকর্মীর জন্য ৫৬ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার আশাকর্মীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরেই সাম্মানিক ভাতা পাচ্ছিলেন না তাঁরা। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি আশাকর্মীরা।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কারা ভিনরাজ্য থেকে এসে বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে হোম কোয়ারান্টিনে রাখা। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়ানো সেই সমস্ত ব্যক্তিকে ঘরে বন্দি থাকতে বলা। এই সমস্ত কাজ করতে গিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে হুমকি, গালমন্দ অনেক কিছুই শুনতে হচ্ছে আশাকর্মীদের। যাঁরা বাইরে থেকে আসছেন বা আগে এসেছেন, তার তালিকা তৈরি করার কাজ করছেন এই কর্মীরা। এলাকায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়লে সেই এলাকাকে অবরুদ্ধ বা কন্টেনমেন্ট করা হয়েছে। সেই এলাকা ছাড়াও ওই এলাকার দু-তিন কিমি এলাকার মধ্যে বাসিন্দাদের ফিভার সার্ভিলেন্স করা, থার্মাল স্ক্রিনিং করার কাজেও ভরসা সেই আশাকর্মীরা। এমনকি মানুষকে সচেতন করা থেকে সমাজকল্যাণ দপ্তরের আইসিডিএস কেন্দ্রগুলিকে সাহায্য করার মতো কাজও করতে হচ্ছে তাঁদের। স্বাস্থ্য দপ্তর সম্প্রতি জেলার এলাকাভিত্তিক যে র্যাপিড টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানেও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশে থেকে বাড়ি চেনানো, পাশে থেকে সাহায্য করার মতো কাজগুলিও করে চলেছেন আশাকর্মীরা। কিন্তু এই আশাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত বলে অভিযোগ উঠছিল। মাঝেমধ্যেই তাঁদের বকেয়া সাম্মানিক নিয়ে অভিযোগ করতে শোনা গিয়েছে আশাকর্মীদের। যে সমস্ত নতুন আশাকর্মী এক-দুবছর ধরে কাজ করছেন তাঁদেরও সাম্মানিক ভাতা গত বছর থেকেই বকেয়া ছিল। তবে স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা (এইচএফ/এফডব্লিউ/০১/এইচএফডব্লিউ-৩৫০১৩/২/২০১৮) থেকে জানা গিয়েছে, রাজ্যজুড়েই পুরোনো আশাকর্মীদের এবছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ৩৫০০ টাকা করে সাম্মানিক ভাতা এবং নতুন আশাকর্মীদের গত বছরের নভেম্বর থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একই পরিমাণ টাকা সাম্মানিক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে মোট ৫৩ হাজার ৬৯ জন আশাকর্মী এই সাম্মানিক ভাতা পাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গে পুরোনো আশাকর্মীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৬৫ । নতুনদের নিয়ে সংখ্যাটা উত্তরবঙ্গে ১৭ হাজারের কিছু বেশি হবে। সাম্মানিক ভাতা মালদা জেলাকে সবচেয়ে বেশি ৩ কোটি ১২ লক্ষ টাকা, কোচবিহার জেলায় ২ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা, উত্তর দিনাজপুরে ১ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা করে, দার্জিলিং জেলায় ৪৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ আশা স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদিকা চুমকি দাস বলেন, আমাদের সাম্মানিক ভাতা বকেয়া রয়েছে। বকেয়া সাম্মানিক মেটাতে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছি। যদি এই পরিস্থিতিতে আমাদের বকেয়া সাম্মানিক ভাতা দেওয়া হয় তাহলে খুব উপকৃত হব। সাম্মানিকের বাইরে আমাদের টিএ বিল আলাদা করে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর নিযুক্ত উত্তরবঙ্গের দাযিত্বপ্রাপ্ত ওএসডি ডা: সুশান্ত রায় বলেন, আশাকর্মীরা বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। তাঁদের বকেয়া সাম্মানিক নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। অবশেষে আশা স্বাস্থ্যকর্মীদের মাসিক সাম্মানিক বরাদ্দের নির্দেশ এসেছে।