এটিকে মোহনবাগান – ২ (লিস্টন, কৃষ্ণা)
এফসি গোয়া – ১ (ওর্টিজ)
কলকাতা : ভূমিপুত্র হয়েও গোয়ার ফুটবলে তিনি বরাবর উপেক্ষিত। সেই উপেক্ষার জবাব কি এদিন মিটিয়ে দিলেন লিস্টন কোলাসো? গোয়া ম্যাচের আগে কথা দিয়েছিলেন, গোল করবেন। করলেনও। এবং সেটা বিশ্বমানের। যা দেখার পর ডাগআউটে মাথায় হাত বিহ্বল হুয়ান ফেরান্দোর!
ছিপছিপে তরুণ। মুখে ভুবনভোলানো হাসি। দেখে কে বলবে তাঁর পায়ে রয়েছে ওইরকম পাওয়ারশট। সঙ্গে অবিশ্বাস্য গতি আর স্কিল। এককথায় ২৩ বছরের কোলাসো যেন কমপ্লিট প্যাকেজ। মরশুমের শুরুতে সেই কোলাসোকে হায়দরাবাদ থেকে তুলে নিয়ে যে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি এটিকে মোহনবাগানের কর্তারা তা আজ একশো শতাংশ প্রমাণিত। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় ও অসাধারণ প্রশংসার এই শব্দবন্ধে কোলাসোর বিশ্বমানের গোলের কীর্তিকে বেঁধে ফেলা মুশকিল।
ম্যাচের বয়স তখন মাত্র ২৩ মিনিট। মহম্মদ নেমিলের ভুল ক্রস দীপক টেংরির পা ছুঁয়ে পৌঁছে গিয়েছিল মাঝমাঠে দাঁড়িয়ে থাকা কোলাসোর কাছে। তারপর নেইমারসুলভ সোলো-রান। বক্সের সামান্য দূর থেকে কাট করে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শট। আর তাতেই কার্যসিদ্ধি। শরীর ছুঁড়েও কিছু করার ছিল না গোয়ার গোলরক্ষক ধীরজ সিংয়ের। কোলাসোর ব্যানানা কিক ডিপ করে গোলে ঢোকার পর ক্যামেরা নজরবন্দি করছিল ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলা গোলরক্ষককে। ধীরজের অভিব্যক্তিতে ধরা পড়ছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ় দশা।
কোলাসোর গোলের পরেই খেলা থেকে হারিয়ে গেল এফসি গোয়া। তার আগে দুদলের লড়াই বাঁধা পড়েছিল মাঝমাঠে, সাবধানী ফুটবলের মোড়কে। প্রতিপক্ষ গোয়া বলেই হয়তো অন্য আবেগ কাজ করছিল ফেরান্দোর মধ্যে। তাই চেনা আগ্রাসী ছন্দ ভুলে শুরুতে সতর্ক ফুটবলে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল কার্ল ম্যাকহিউজ, তিরিদের। হুগো বৌমাস ছন্দে না থাকায় চেনা মেজাজটাও উধাও থাকল বাগানের মাঝমাঠে। তবে হুগোর অফফর্ম একাই ঢাকলেন লিস্টন।
আরও একজনের কথা বলার। তিনি রয় কৃষ্ণা। আগের ম্যাচে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। এদিন চেলসির প্রাক্তন গোলরক্ষক পিটার চেকের কায়দায় হেড শিল্ড পরে নেমেছিলেন ফিজির তারকা। নতুন লুকে বেমানান কৃষ্ণা প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়ে রইলেন। বৌমোসের সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াও এদিন সেভাবে দানা বাঁধল না। কৃষ্ণা ৫৬ মিনিটে একটিমাত্র সুযোগ পেয়েছিলেন। তাতেই গোল।
তারপরেও জয় নিশ্চিত দেখাচ্ছিল না এটিকে মোহনবাগানের। সৌজন্যে অমরিন্দার সিংয়ের শিশুসুলভ ভুল। গত মরশুমের সাফল্যের গ্লাভসজোড়া যেন মুম্বইয়ে ফেলে এসেছেন বাগান দুর্গের শেষ প্রহরী। চলতি আইএসএলে তাঁর ছোটখোটা ভুলের মাশুল গুনতে হয়েছে সবুজ-মেরুনকে। এদিন জর্জে ওর্টিজের নিরীহ শট শিক্ষানবীশী ঢংয়ে হাত থেকে ফস্কালেন। নিজের ভুলে বিরক্তিও চোখে পড়ল অমরিন্দারের শরীরীভাষায়।
শেষদিকে ম্যাচে সমতা ফেরাতে গোয়া মরিয়া হয়ে উঠলেও নিজের প্রাক্তন দলের বিরুদ্ধে সম্মানের যুদ্ধ জিতেই মাঠ ছাড়লেন ফেরান্দো। সেইসঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে জোড়া জয়ে এটিকে মোহনবাগানকে তুলে আনলেন লিগ টেবিলের তিন নম্বরে। বছর শেষে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মেরিনার্সদের।