বর্ধমান: নন্দীগ্রামের বিরুলিয়ায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জখম করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের। এমন অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার সকাল ৯’টা থেকে বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত মেমারি-চুঁচুড়া রোডে জৌগ্রাম আমড়া মোড়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। জামালপুর ব্লক তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি মইনুর রহমান মিদ্যার নেতৃত্বে বহু তৃণমূল যুব কংগ্রেস কর্মী এদিন পথ অবরোধ বিক্ষোভে অংশ নেন। যুব কংগ্রেস কর্মীদের পথ অবরোধ বিক্ষোভের জেরে এই সড়কপথে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। নিত্যযাত্রী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে পরে অবরোধ তুলে নেয় যুব তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। তবে অবরোধ তুলতে পুলিশকে আসরে নামতে দেখা যায়নি।

এরই প্রতিবাদে আজ সকালে বর্ধমান জিটি রোড অবরোধ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। এদিন কার্জন গেটের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন তাঁরা। অবরোধে বর্ধমান-কলকাতা রোডে বহু যানবাহন আটকে যায়। বর্ধমান থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে,তবুও আন্দোলন চালিয়ে যায় তৃণমূল নেতা কর্মীরা। পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখপাত্র প্রসেজিৎ দাস জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর নন্দীগ্রামে আক্রমণ করা হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে না পারেন তারজন্যই বিজেপির চক্রান্ত, বিশেষত বিজেপির এই চক্রান্ত বলে দাবি অবরোধকারীদের। প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধে বর্ধমান শহরে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে সড়কপথে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পাশাপাশি রায়না ২ ব্লকের লোহাই বাজারে বর্ধমান আরামবাগ রোডের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কর্মীরা। ৪০ মিনিট ধরে অবরোধ-বিক্ষোভ চলে পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিয়ে বর্ধমান আরামবাগ রোড স্বাভাবিক করে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে হামলার প্রতিবাদে বুধবার রাত থেকে পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল ও দূর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে থেকে আবার নতুন করে সেই বিক্ষোভ শুরু হয়। যা দিনভর চলে। বুধবার রাতে দূর্গাপুর পুরনিগমের ১৪ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও কর্মীরা ওল্ড কোর্ট এলাকায় ২ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।
একই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দূর্গাপুর পুরনিগমের ২৪ নং ওয়ার্ডের গণতন্ত্র কলোনি এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলর লাভলী রায়ের নেতৃত্বে এই মিছিল হয়। এদিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফ অন্ডালে ২ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। নেতৃত্ব দেন ছাত্রনেতা কৌশিক মণ্ডল। একইভাবে দূর্গাপুরের মুচিপাড়ায় ২নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। প্রায় ঘন্টাখানেকের এই অবরোধে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয় জাতীয় সড়কে। দুটি লেনেই সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে গাড়ি। ঐ হামলার ঘটনার জন্য শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতৃত্বকে এদিন আক্রমণ করা হয়। ঘন্টাখানেক অবরোধের পর পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভ তুলে নেয় অবরোধকারীরা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে হামলার প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী ও সমর্থকরা এদিন দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ পানাগড় বাজারে অবরোধ করেন। সেই রাস্তা অবরোধে নেতৃত্ব দেন জেলা যুব কমিটির সদস্য তথা ব্লকের হিন্দি প্রকোষ্ট সংগঠনের সভাপতি কুলদীপ সিং ও তৃনমূল যুব কংগ্রেসের কাঁকসা ব্লকের সভাপতি কুলদীপ সরকার সহ অন্যান্যরা। এই রাস্তা অবরোধের যেরে দীর্ঘক্ষন পানাগড় বাজারের ব্যস্ততম রাস্তায় আটকে যায় গাড়ি। সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের।
এদিন জেলার অন্ডালের ডিভিসি মোড়ের কাছে ২ নং জাতীয় সড়কে আসানসোল ও বর্ধমান দিকে যাওয়ার লেনের উপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয় অন্ডাল ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী ও সমর্থকরা। ২নং জাতীয় সড়কের দুটি লেনে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা অবরোধ করায় ব্যাপক যানজট তৈরী হয়।ছাত্রনেতা কৌশিক মণ্ডল জানান, যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হত্যার চক্রান্ত করা হয়েছে তার জন্য দায়ী শুভেন্দু অধিকারী। অবিলম্বে তার গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয় এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে। মিনিট কুড়ি ২ নং নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করার পর পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় অবরোধকারীরা।

অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর উপরে হামলার প্রতিবাদ এদিন সকাল থেকে আসানসোল, বার্ণপুর, রুপনারায়নপুর, জামুড়িয়া, কুলটি ও বারাবনির বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাস্তা অবরোধ, কুশপুত্তলিকা দাহ করা ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এদিন রুপনারায়নপুরে আসানসোল চিত্তরঞ্জন রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয় শাসক দলের তরফে। পরে সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।