নাগরাকাটা : নিজের বাগান বন্ধ। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতো অবস্থা তাঁর। তবু লকডাউনে অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার অনন্য নজির গড়ছেন নাগেশ্বরী চা বাগানের শ্রমিক বাবুরাম চৌধুরী। লকডাউনের পর থেকে কাজ হারানো প্রতিবেশীদের সাধ্যমতো বিলিয়ে যাচ্ছেন শাকসবজি। এমনকি বাগান থেকে পাওয়া নিজের অন্নপূর্ণা অন্ত্যোদয় যোজনার র্যাশনটুকুও খাদ্যসংকটে পড়া সহকর্মীকে দিয়ে দিয়েছেন।
গত ২৪ মার্চ থেকে অন্য বাগানের মতো নাগেশ্বরীও বন্ধ হয়। তারপর সরকারি বিধি মেনে ২৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে বাগান চালু হলেও সবার কাজ মিলছে না একলপ্তে। তার উপর লকডাউন পিরিয়ডের মজুরিও মেলেনি। ফলে তাঁর নিজের শ্রমিক আবাস দোকান লাইন কিংবা পাশের বোদো লাইনের ঘরে ঘরে এখন খাদ্যসংকট। বাবুরাম চৌধুরী তাঁদের প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজের জমানো জ্বালানির খড়কুটো ও লাকড়ি বিক্রি করেছেন। বর্তমানে ওই সঞ্চয় ফুরোনোর পর এখন চা গাছের শুকনো ডালপালা থেকে শুরু করে নানা স্থানে পড়ে থাকা কাঠ সংগ্রহ করছেন। সেসব বিক্রি করে কিনে আনছেন সবজি সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। বিলিয়ে দিচ্ছেন সেইসব জিনিস।
মেটেলি ব্লকের ডানকানসের রুগ্ন নাগেশ্বরী বাগানের যে বাড়িতে তিনি থাকেন, সেটিরও ভগ্নদশা। স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন কয়েক বছর আগে। এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক ছেলে কাজের জন্য ভিনরাজ্যে আছে। লকডাউনে ছেলের টাকা পাঠানো বন্ধ। বাবুরামের প্রতিবেশী বিপ্তা ওরাওঁ, সুরজ লোহার, রাজ মাহালিরা জানান, তিনি যা করছেন তা সামর্থ্য থাকলেও অনেকে করবেন না। এর জন্য বড় মন থাকা দরকার। বাবুরামের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। নাগরাকাটার বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বলেন, মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ওই শ্রমিকের কাজ। ওঁকে স্যালুট জানাই। তাঁর এই কাজ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাবুরামের জবাব, কত কিছুই তো করার ইচ্ছে জাগে। তা আর পারি কোথায়। সবার যদি জুটে যায় তবে আমারও জুটবে।