নিবেদিতা দাস, মাটিগাড়া : এশিয়ান মাস্টার্স অ্যাথলেটিক্সে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন ৬৫ বছরের সোমা দত্ত। বাগডোগরার (Bagdogra) ভুজিয়াপানি পুঁটিমারির বাসিন্দা সোমা আগামী বছর মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়াতে অনুষ্ঠিত হতে চলা ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেবেন। এর জন্য প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
১৯৫৪ সালে বীরপাড়ার মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম সোমার। বাবা চাকরি করলেও সংসারে টানাটানি লেগেই থাকত। আট সন্তানকে নিয়ে শিলিগুড়িতে চলে আসেন সোমার বাবা। সোমার কথায়, হাকিমপাড়া প্রাইমারি স্কুল শেষ করে ভর্তি হই শিলিগুড়ি গার্লস হাইস্কুলে। এরপর ভূগোলে শিলিগুড়ি কলেজের স্নাতক এবং উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করি। কলকাতায় কিছুদিন পড়াশোনার পর ১৯৮৫ সালে গাজোলের একটি স্কুলে ভূগোলের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিই।
খেলার জগতে কীভাবে? সোমা বললেন, গাজোল থেকে ফাঁসিদেওয়া হাইস্কুলে বদলি হই। ৩২ বছর সেখানে কাজ করার পর একদিন অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে একটি খেলায় নাম লেখাই। সেখানে প্রথম স্থান অধিকার করার পর জানতে পারি শিলিগুড়িতে রাজ্য স্তরের খেলা হবে। ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা তারাই নাম দিতে পারবে। কিন্তু সেখানে খেলতে পারব কি না ভয় ছিল। তাঁর কথায়, সাহস করে নাম লিখিয়ে ফেলি। খেলার জন্য জুতো, ট্র্যাক সুট কিছুই ছিল না। ষষ্ঠী রায় নামে এক ছাত্রী জুতো ও জামা কিনতে সাহায্য করে।
২০১২ সালে রাজ্য স্তরের হাইজাম্পে প্রথম স্থান অধিকার করেন সোমা। এরপর জাতীয় স্তরে নামার জন্য মনোনীত হন তিনি। সেই সময় তাঁর কোচ ছিলেন জীবন মৈত্র। সেই বছরই জাতীয় স্তরেও স্বর্ণপদক জেতেন তিনি। তারপর থেকেই শিক্ষকতার পাশাপাশি খেলাতেও মনোনিবেশ করেন সোমা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে তাইওয়ানে যান। এরপর এশিয়ান গেমস, ওয়ার্ল্ড মিটে দেশের হয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি। কখনও চতুর্থ, কখনও ১০৩টি দেশের মধ্যে দশম হয়েছেন। সোমা জানান, শুনতে সহজ হলেও এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না। স্কুল থেকে ছুটি পাওয়া যেত না। তাই অনুশীলনের জন্য সময় পেতেন না। এছাড়া বিদেশে খেলতে যাওয়ার জন্য প্রচুর টাকারও প্রয়োজন হয়। কখনও ঋণ নিয়ে কখনও বন্ধুর সাহায্য নিয়ে বিদেশে গিয়েছেন।
সোমার কথায়, আমি থেমে থাকতে চাই না। আলাদা করে অনুশীলনে বেশি সময় দিতে পারি না বলে বাড়ির কাজের মাধ্যমে শরীরচর্চা করি। আর বাগান পরিষ্কার করা আমার প্রিয় কাজ। মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়াতে খেলতে যাব। একাই প্র্যাকটিস শুরু করেছি। আমার এলাকার আদিবাসী ছেলেমেয়েদের খেলার আগ্রহ রয়েছে। তাই তাদেরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
আরও পড়ুন: Siliguri | মেয়াদ উত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রে ঝুঁকির যাত্রা নিগমের বাসে