প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: আগামী সপ্তাহে, ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু বাজেট অধিবেশন। ২০২৪-এর নির্বাচনের সন্ধিলগ্নে মোদি সরকারের অন্তিম বাজেট নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে কেন্দ্রে। তার মধ্যে বিবিসি নির্মিত ডকু সিরিজ ‘ইন্ডিয়া দ্য মোদি কোয়েশ্চন’ নিয়ে উত্তপ্ত রাজনৈতিক মহল।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনে ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চন’ নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল সহ সমমনোভাবাপন্ন বিরোধীদের একাংশ। এই আশঙ্কা আঁচ করে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবিরও। ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ নিয়ে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংয়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের ওপর পালটা চাপ সৃষ্টি করতে মনস্থ বিজেপি, তা অবশ্য পরিস্থিতি বুঝেই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেট ২০২৩-২৪’র গুরুত্ব অনুধাবন করে যদি বিরোধী শিবির সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথে হাঁটে, যার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ, সে ক্ষেত্রে কোনও বাড়তি মতানৈক্যের পথে পা বাড়াবে না কেন্দ্রীয় শাসকদল। অন্যথায় ‘মোদি কোয়েশ্চন’র নিয়ে উঠতে চলা সম্ভাব্য বিতর্ক তথা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মোড় ঘোরাতে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক সহ নানাবিধ বিরোধী-সংস্কৃতি বিরুদ্ধ ইস্যু নিয়ে প্রস্তুত থাকতে চায় শাসক শিবির। যদিও এই বিষয়ে প্রাথমিকস্তরে টুঁ শব্দটি করেনি কোনও পক্ষ।
কেন্দ্রীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে, আগামী ২৯ জানুয়ারি আসন্ন বাজেট অধিবেশন উপলক্ষ্যে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সহ শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন মন্ত্রীসভার সদস্য, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীরা। বাজেটের দিকনির্দেশ প্রক্রিয়া সাধিত হবে সংশ্লিষ্ট বৈঠকেই। এর পাশাপাশি শেষবেলাতেও মন্ত্রীসভায় রদবদলের ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। সংসদে অথবা সাউথ ব্লক-নর্থব্লকে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে মন্ত্রীসভায় রদবদলের জল্পনা। সামনেই আবার কেন্দ্রীয় বাজেট অধিবেশন। মোদির দ্বিতীয় দফার কার্যকালের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট এবার। কাজেই সেটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ যে হবে সেটা আগেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যদি সত্যিই মন্ত্রীসভার রদবদল করতে হয় তাহলে কি বাজেট অধিবেশনের পরেই করবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি? এই নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। সে সব ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় মহলের নয়া শিরঃপীড়া হয়ে উঠেছে বিরোধীদের একাংশে গুজরাটে রক্তাক্ষয়ী দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চন’ নিয়ে সংসদে সম্ভাব্য চর্চার জল্পনাও। অন্যদিকে, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটে খুব সাধারণভাবেই লড়তে চাইছে বিজেপি। কোনওরকম বড় চমক তারা তৈরি করতে চাইছে না। দিল্লিতে বিজেপির বিগত কোর কমিটির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। লোকসভা ভোট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে জেপি নাড্ডার কার্যকালের মেয়াদও। বিজেপির এবারের টার্গেট ৪০০ আসন। কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধির রেকর্ড ভাঙতে চাইছে গেরুয়া শিবির। স্বাভাবিকভাবেই, এই পরিকল্পনায় তথ্যচিত্র বিতর্ক নিয়ে কোনও চোনা পড়ুক আদতে তা চাইছে না বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। আর তাই বাজেট অধিবেশনের দু’টি পর্বই তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় মহলে।
প্রসঙ্গত, বিবিসি তথ্যচিত্র বিতর্ক নিয়ে প্রথম আঁচ উসকেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই বিতর্কিত তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও, বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন তা নিয়ে টুইট করলে, তাকে অনুসরণ করেন জহর সরকার, মহুয়া মৈত্রের মতো ঘাসফুল শিবিরের প্রতিনিধিরা। একই ইস্যুতে সরব হয়েছে কংগ্রেসও। এদিন রাহুল গান্ধি বলেন, ‘বিজেপি চাইলে তথ্যচিত্রকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতেই পারে, কিন্তু যা সত্য তাকে চাপা রাখা যায় না, তা ঠিকই প্রকাশ্যে আসে।’ আইমিম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, শিবসেনা, ডিএমকে-র মতো দল তথা দলীয় নেতারাও এনিয়ে সরব হন, স্বাভাবিকভাবেই যার জেরে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে গেরুয়া শিবিরের অনুগতদের। সরকারের কার্যকালীন মেয়াদের শেষ বাজেট অধিবেশনেও যদি এই বিতর্ক ছড়ায়, তবে তা মোটেই স্বস্তিদায়ক হবে না শাসকদলের পক্ষে। বিরোধী বিক্ষোভের সেই ক্ষোভ ধামাচাপা দিতে ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকেও গঠনমূলক পরিকল্পনার দোহাই দিয়ে বিরোধীদের কাছে বিতর্ক-উদ্বেগহীন অধিবেশন চালাতে সহযোগিতার আশ্বাস চাইতে পারে সরকারপক্ষ। তবে ৯ রাজ্যের নির্বাচনের প্রস্তুতি আবহে তা কতটা প্রভাব ফেলবে, সর্বোপরি গ্রহণ যোগ্য হবে সে নিয়েই রয়েছে আশঙ্কা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্ষীয়ান বিরোধী সাংসদের দাবি, ‘নেতাজি জয়ন্তী উপলক্ষ্যে সংসদের সেন্ট্রাল হলে উপস্থিত পড়ুয়াদের প্রধানমন্ত্রী ‘দেশের মহান মনীষীদের আত্মজীবনী পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। উৎসাহ দিয়েছেন আরও বেশি করে বই পড়তে। অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী, যিনি নিজেকে কর্মযোগী মনে করেন, কিন্তু বিবিসি-র তথ্যচিত্রের ভয়ে শঙ্কিত হয়ে তা সারাদেশে নিষিদ্ধ করছেন। কিন্তু এভাবে সত্যগোপণ করা, তা নিষিদ্ধ করা রাষ্ট্রনায়কোচিত ভাবমূর্তির পরিপন্থী। সংসদে তার জবাব দিতেও হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে।’
লেটেস্ট খবর জানার জন্য দেখুন www.uttarbangasambad.com এবং ব্রেকিং নিউজ (Breaking News) এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন উত্তরবঙ্গ সংবাদ টিভিতে ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন আমাদের Facebook, Twitter এবং Instagram পেজ
আরও পড়ুন: চেয়ার পেতে দেরি, রাগের বশে কর্মীকে ঢিল ছুড়লেন মন্ত্রী