মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: ভারতবর্ষ সনাতনধর্মী ; যুগ যুগ ধরে এমন অনেক বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করে সে যা বাকি বিশ্বের কাছে বিস্ময়বোধক । দেশ কাল জাতি ভেদে তার আপনত্বের ব্যঞ্জনা বহু গভীর ; কখনো বাঙময় , কখনো শব্দহীন । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চন্দনের কথা , এর কোন বৈদিক কৌলীন্য না থাকলেও সনাতনীরা একে গুরুত্ব দিয়ে নিজের করে নিয়েছেন এর ওষধি গুণ ও শৈত্যকারক গুণের জন্য, কারণ আমাদের চতুর্বেদের কোথাও চন্দনের কথা লেখা নেই , সূত্র ও সংহিতা রচনাকারেরাও এর উল্লেখ করেন নি , তবে “ বেদানুবর্তী সংহিতা “তে অনেক পরে এর উল্লেখ পাওয়া যায়, তবে অথর্ববেদে রক্তচন্দনের কথা লেখা আছে । সেখানে বলা হয়েছে শরীরের সব রকমের জ্বালার জন্য রক্তচন্দন ভীষণ উপকারী।
আসুন আজ জানি চন্দনের কী কী গুণ ….
১) ব্লাডপ্রেশারের সমস্যায় ভুগছেন যারা তাঁরা সকালে খালিপেটে সাদাচন্দন ঘন করে ঘষা এক চা -চামচ আধ কাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
২) যাঁদের পুরনো ব্রঙ্কাইটিসের সঙ্গে প্রেশারের সমস্যা আছে তাঁরা অল্প করে চন্দন ঘষা খেতে পারেন তবে তুলসীর পাতাও খেতে হবে একসাথে।
৩) জ্বরের পিপাসায় এবং শরীর জ্বালায় চন্দন ঘষা আধ চা-চামচ থেকে এক চা-চামচ কচি ডাবের জলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে দুই ক্ষেত্রেই কাজ দেয়, তবে সর্দি থাকলে বেশি না দেওয়াই ভালো।
৪) শীতল পানীয় হিসেবে গরমকালে সাদা চন্দন ঘষা ঠাণ্ডা জলের সঙ্গে খেলে পেট ঠাণ্ডা থাকে।
৫) যাঁদের খুব ঘাম হয় তাঁদের ঘষা চন্দনের সঙ্গে বেনামূল বেটে একটু কর্পূর মিশিয়ে গায়ে মাখতে দিতেন প্রাচীন বৈদ্যরা।
৬) ছোট থেকে বড় সকলের রূপরক্ষায় চন্দন ভীষণ উপকারী, মেয়েরা যে ব্রণ বা দাগের সমস্যায় ভোগেন তাতে চন্দন বাটা মুখে সারারাত মেখে রেখে পরদিন ধুয়ে নিয়ে হাল্কা ক্রিম লাগালেই হবে। প্রতিদিন করলে ত্বক দাগমুক্ত থাকবে।
৭) শীতে কমলালেবুর তাজা খোসার সঙ্গে অল্প করে চন্দন বাটা ,অলিভ অয়েল ,পাঁউরুটি ব্লেন্ডারে পিষে এক চা-চামচ চিনি মিশিয়ে সারা গায়ে স্নানের আগে ঘষে নিন কাঁচের মত ত্বক পাবেন।
৮) মেকআপ করবেন ? মুখটা তেলতেল করছে ? চন্দন গুঁড়ো, সামান্য টক দই আর মধু মিশিয়ে ত্বকে লেপে রাখুন অন্তত ১৫ মিনিট , এরপর হালকা হাতে ঘষে ঠাণ্ডা জলে মুখ ধুয়ে নিন। এই তেলা ত্বকই আবার শীতে যখন অল্প শুষ্ক হয়ে যায় তখন দই এর বদলে কাঁচা দুধ আর স্ক্রাবার হিসেবে চিনি মেশালেই কেল্লা ফতে, অন্যান্য উপকরণ একই থাকবে।
৯) শীত শেষে বসন্ত কালেই প্রাদুর্ভাব হয় বসন্ত বা পক্সের , হিঞ্চে শাকের রসে সাদা চন্দন ঘষে খাওয়ালে গুটি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় আর রিস্ক একটু কমে যায় । বসন্ত রোগের জ্বালা কমাতেও চন্দন বেটে সারা শরীরে প্রলেপ দিলে জ্বালা আর চুলকানি কমে।
১০) এখন রূপচর্চায় এসেনসিয়াল অয়েলের গুরুত্ব রয়েছে অনেকটাই, সময়াভাবে যদি চন্দন মাখা বা রূপটান নেওয়া না যায় তাহলে গরম জলে চন্দন তেল ফেলে তা দিয়ে স্নান করলেও রিফ্রেশিং অনুভূতি হবে, এই জলে আপনি বাচ্চাদেরও (৫-১০) স্নান করাতে পারেন যদি ঐ গন্ধ তার পছন্দের হয় ।
নিজের প্রয়োজন ও ভাললাগা বুঝে আপনি যেকোনো এসেনসিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন আপনার ফেসপ্যাক,বডিপ্যাক,বডি অয়েল এমনকি হেয়ার অয়েলেও।
আরও পড়ুনঃ চুলের যত্ন রাখবেন কীভাবে? জেনে নিন হেয়ার প্যাক যা আপনার নাগালেই