মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: আমাদের এই বসুন্ধরা বিবিধ গুণের অধিকারী, তিনি তার সেই গুণাবলী আমাদের জন্য ফুল ,ফল ,কাঠ, পুকুর, নদী সমুদ্ররূপে দিয়েছেন; প্রতি মুহূর্তে তার দেওয়া শীতল বাতাস, বৃষ্টিপাত আমাদের ছুঁয়ে যায়। বৃক্ষ থেকে তৃণগুল্মলতা সবই তার দয়াপরবশতার উদাহরণ। মানুষ ধীরে ধীরে যখন উন্নত হতে শুরু করে তখন থেকেই সুখস্বাচ্ছ্যন্দের প্রতি সে নজর ঘোরায় । অনেক মাথা খাটানোর পর সে দেখল শাল, সেগুন, শিশু,জারুল ও শিরীষ, কাঠ হিসেবে এগুলো মজবুত এগুলো দিয়ে খাট আলমারি টেবিল ইত্যাদি তৈরি করলে অনেকদিন অক্ষত থাকে , তারা ঝুঁকল এই সমস্ত কাঠের দিকে। শুধু কাঠ নয় গাছের পাতাও ব্যবহার করার উপায় তারা খুঁজে বের করে ফেলল । গাছের উপকারিতা দেখে মানুষ গাছকে বৃক্ষদেবতা রূপে পুজো করতে শুরু করলো , এমনই পুজো পাওয়া গাছ শিরীষ। শিরীষের কাঠ ছাড়াও ছাল ও আঠা বাড়ীতে রাখার কথা বলতেন প্রাচীন বৈদ্যরা । মহীরুহ এই গাছটিকে এখনো শহরের বা গ্ৰামের রাস্তার ধারে ছায়াপ্রদানকারী রূপে দেখা যায়। শিরীষের পাতা, ফুল,ফল,ছাল,কাঠ সবই আমাদের উপকারে লাগে।
১) ইঁদুর যদি কামড়ে দেয় তাহলে সবার আগে শিরীষের ছাল বেটে ক্ষতস্থানে চারদিকে প্রলেপ দিয়ে দিন এবং সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ছালের রস পান করান।
২) বিষাক্ত পোকা কামড়ালে, কিংবা আরশোলা, উচ্চিংড়ে বা মাকড়সা। চেটে দিলে শিরীষ গাছের মূলের ছাল বেটে লাগালে বিষক্রিয়া হয়না।
৩)আধকপালের ব্যথা বড় কষ্টকর, এতে শিরীষ মূলের ছাল চূর্ণ বা বীজ চূর্ণ নস্যির মতো ব্যবহার করলে এই ব্যথা আর থাকেনা , তবে প্রথম প্রথম এই নস্যি অল্পপরিমাণ নিতে হবে।
৪) দাঁত নড়তে থাকলে এই গাছের মূলের ছাল গুঁড়ো দাঁত মাজলে দাঁত ও মাড়ি শক্ত থাকে।
৫) রক্ত দূষিত হয়ে গিয়ে গায়ে কালো কালো দাগ হলে সে ক্ষেত্রে অল্প ঘি মিশিয়ে লাগালেই স্বাভাবিক হয়।
৬) রাতে দিব্যি ঘুমিয়ে আছেন হঠাৎ দেখলেন ঘেমে জল হয়ে গেছেন, কি করবেন? এর মূলের ছালচূর্ণ খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই ঘাম কমে যাবে।
৭) শিরীষ পাতার রস রাতকানায় খাওয়ালে অদ্ভূত উপকারিতা।
৮)চোখ ওঠাতে শিরীষের বীজ ঘষে কাজলের মতো করে চোখে লাগালে এর উপশম হয়।
৯) যারা শুক্রতারল্যে ভুগছেন তারা শিরীষের বীজচূর্ণ ১/২ গ্ৰাম মিছরির সঙ্গে মিশিয়ে গরম দুধের খেয়ে দেখতে পারেন ।
১০) গলগন্ড বা গয়টার বা চলতি বাংলায় ঘ্যাঁঘ হলে শিরীষের বীজ বেটে গলায় প্রলেপ দিন , খুব ভালো কাজে দেয়।