নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য এই রাজ্যের কোনও বেসরকারি ল্যাবরেটরি ছাড়পত্র পেল না। সোমবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফল মেডিকেল রিসার্চ বা আইসিএমআর সারা দেশে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত ল্যাবের তালিকা প্রকাশ করেছে। ওই তালিকায় দেশের নানা রাজ্যের ১২টি ল্যাবের নাম থাকলেও এই রাজ্যের কোনও বেসরকারি ল্যাবের নাম নেই। আইসিএমআর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ১১৬ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৮৯টি ল্যাব নমুুনা পরীক্ষার জন্য তৈরি। বাকি ২৭টিকে দ্রুত নমুনা পরীক্ষার জন্য উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে।
এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র দুটি পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। প্রথমটি বেলেঘাটার নাইসেডে, দ্বিতীয়টি এসএসকেএমে। যদিও এখনও পর্যন্ত যত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তার ৯০ শতাংশই করা হয়েছে নাইসেডে। স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, এই রাজ্যে এনএবিএল অনুমোদিত ২৭৪টি ল্যাব রয়েছে। এদের অনেকে করোনা পরীক্ষার জন্য ছাড়পত্রের আবেদন করেছে। কিন্তু ছাড়পত্রের জন্য যে গাইডলাইন আইসিএমআর বেঁধে দিয়েছে, ওই ল্যাবগুলির কেউই তা পূরণ করতে পারেনি।
ফলে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষকে করোনার জন্য লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে এখনও কলকাতার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। এই রাজ্যে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯, মৃত্যু হয়েছে একজনের। আমাদের দেশ এবার তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে। এই পর্যায়ে মোকাবিলার প্রস্তুতি হিসেবে কাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে, তার তালিকা বেঁধে দিয়েছে আইসিএমআর। সেই তালিকা বেশ দীর্ঘ। ফলে আগামীদিনে প্রচুর নমুনা পরীক্ষার দরকার হয়ে পড়বে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ল্যাবের সংখ্যা না বাড়ানোয় স্বাস্থ্যভবন উদ্বিগ্ন।
এদিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তার. হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয মন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় আসানসোলে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার একটি ল্যাব তৈরি করার আর্জি জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি বলেছেন, আসানসোল এই রাজ্যের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল শহর। তাই এখানে একটি নমুনা পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করা খুব জরুরি। এখন এখান থেকে নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীদের আড়াইশো কিলোমিটার দূরে কলকাতায় যেতে হয়।
আইসিএমআরের পাঠানো নতুন তালিকা অনুযায়ী করোনা আক্রমণের তৃতীয় পর্যায়ে সারা দেশে যাদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা দরকার, তারা হলেন যেসব ব্যক্তি ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ রয়েছে, করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা যেসব ব্যক্তির এই উপসর্গ দেখা দিয়েছে, যেসব স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকের এই উপসর্গ রয়েছে, এমনকি যে কোনও হাসপাতালে ভর্তি যেসব রোগীর এই উপসর্গগুলির দেখা দিয়েছে, তাদের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে।
এছাড়া উপসর্গ না থাকলেও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা লোকজন পর্যাপ্ত সতর্কতা ছাড়া করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা স্বাস্থ্যকর্মীদেরও নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আইসিএমআর। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যভবন মনে করছে, অবিলম্বে সরকারি ল্যাবের সংখ্যা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি ল্যাবেও এই পরীক্ষা করা জরুরি।