উত্তরবঙ্গ ব্যুরো: কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম, কৃষি আইনসহ একাধিক জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা দেশব্যাপী ভারত বনধের মিশ্র প্রতিক্রিয়া উত্তরবঙ্গ জুড়েই৷ কোচবিহার থেকে কালিয়াগঞ্জ, বালুরঘাট থেকে বানারহাটের ছবিটা ছিল প্রায় একই রকম৷ বনধের সমর্থনে উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই মিছিল করে বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা।
ভারত বনধ সফল করতে রায়গঞ্জ থানার শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখায় বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন। এদিন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। রায়গঞ্জ থানার আইসি ও জেলা পুলিশের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারপরেই দলীয় পতাকা নিয়ে কংগ্রেসের বাইক মিছিল হয়। এদিন সকালে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা রায়গঞ্জ ডিপো থেকে মালদাগামী ও শিলিগুড়িগামী দুটি গাড়ি ছাড়ে, তবে মাঝপথে শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় বনধ সমর্থকরা গাড়ি আটকে পথ অবরোধ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে বনধ সমর্থকদের অবরোধ তুলতে অনুরোধ করেন। অনুরোধ না শোনায় তাদেরকে টেনে-হিঁচড়ে অবরোধ মুক্ত করা হয়। এরপর আবার গাড়িগুলি গন্তব্যের দিকে রওনা দেন। এদিন রায়গঞ্জ শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। কোন বাজারঘাট খোলেনি। তবে সাইকেল ও ভ্যানে করে সবজি মাছ পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করছে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের ডাকা ভারত বনধের ভালো সারা পড়েছে নিশিগঞ্জে। সকাল থেকেই ধর্মঘট সফল করার জন্য রাস্তায় নেমেছে বাম ও কংগ্রেস কর্মীরা। স্থানীয় সিপিএম নেতা অশোক বর্মন ও দিলীপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এদিন সকালে নিশিগঞ্জ বাজারে মিছিল করেন বাম সমর্থকরা। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও, রাস্তায় কিছু সরকারি বাস চোখে পড়েছে। বনধকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিশিগঞ্জে ছিল পুলিশের বিশেষ টহলদারি। ভারত বনধের ভালো সাড়া পড়েছে হলদিবাড়িতে। সকাল থেকেই ধর্মঘট সফল করার জন্য রাস্তায় নেমেছে ধর্মঘটীরা। তাদের একটি মিছিল হলদিবাড়ি শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।পাইকারি সবজি বাজার সহ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে হলদিবাড়ি। অন্যদিনের তুলনায় বাজারে লোকজনের আনাগোনাও অনেকটাই কম। পথে দুই-একটি সরকারি বাস চললেও কোনও প্রকার বেসরকারি যানবাহন চলছে না। নিরাপত্তার জন্য শহর সহ ব্লকের সর্বত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দিনহাটা মহকুমায় অবশ্য সাধারণ ধর্মঘটের ব্যাপক সাড়া পড়ে। এদিন দিনহাটায় রাস্তায় কড়া পুলিশি পাহাড়া লক্ষ্য করা গিয়েছে। সাধারণ ধর্মঘট সফল করতে দফায় মিছিল করে সাধারণ ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। এদিন মহকুমায় দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি বেসরকারি যানবাহনও সেভাবে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। তবে বেশ কিছু সরকারী বাস পথে নামে এদিন। এদিন ধর্মঘট সমর্থনকারীরা দিনহাটা বড়ো পোস্ট অফিস পিকেটিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বের করে দেওয়া কর্মীদের। এদিন সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলে হাঁটেন সিটু নেতা জেলা সভাপতি তারিণী রায়, তারাপদ বর্মন, শ্রমিক নেতা প্রবীর পাল, প্রদীপ রায়, শুভ্রালোক দাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। শ্রমিক নেতা তারাপদ বর্মন বলেন, সারা দেশব্যাপী যে সাধারণ ধর্মঘটের পালিত হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ ব্যাপক সাড়া দিয়েছে। এদিকে সাহেবগঞ্জ থানার পুলিশ দিনহাটা ২ নং ব্লকে ৩০ জন সাধারণ ধর্মঘট সমর্থনকারীদের গ্রেপ্তার করে। এদিকে আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়ায় বনধ ছিল সর্বাত্মক। বন্ধ রয়েছে রাঙ্গালিবাজনা চৌপথির দোকানপাটও। তবে ৪৮ নং এশিয়ান হাইওয়েতে যানবাহন চলছে।
ময়নাগুড়ি ব্লকের পদমতি-২ অঞ্চলেও ধর্মঘটের সাড়া মিলেছে। এদিন সকাল থেকে হেলাপাকড়ি বাজারের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি সমস্ত প্রতিষ্ঠান। ফাঁকা ছিল হেলাপাকড়ি বাসস্ট্যান্ড সহ রাস্তাঘাট। রাস্তায় দুএকটি ছোট গাড়ি চললেও যাত্রীবাহী কোনও বাস চলতে দেখা যায়নি। এলাকার রাস্তায় পথচলতি মানুষের সংখ্যাও ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। অধিকাংশ চা বাগানে কাজ বন্ধ ছিল। সারাভারত কৃষকসভার ময়নাগুড়ি দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক ভূপতিমোহন সেন বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে ও সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারের দাবিতেই এই ধর্মঘট। তাই এলাকার মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে এই ধর্মঘটকে সমর্থন করেছেন। ময়নাগুড়ির সর্বত্র ধর্মঘট সার্থক হয়েছে। বনধকে ঘিরে এলাকায় কোনওরকম অশান্তির খবর মেলেনি।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ময়নাগুড়িতে রাস্তায় নামতে দেখা যায় বনধ সমর্থকদের। এদিন ময়নাগুড়ি ভোটপট্টিতে এশিয়ান অবরোধ করেন বনধ সমর্থকরা৷ অবরোধকারীরা দীর্ঘ সময় রাস্তায় বসে থাকেন। বনধের সমর্থনে মিছিলও বের করা হয়। সকাল থেকেই কোনও দোকানপাট খোলেনি ময়নাগুড়িতে। রাস্তায় মানুষজনকে বের হতে দেখা যায়নি। বেসরকারি যানবাহনও চোখে পড়েনি। সকালে রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের কয়েকটি বাস রাস্তায় দেখা গিয়েছে। সবজি বাজার বসলেও তেমন জমেনি। ময়নাগুড়ি পুরোনো বাজার, সুপার মার্কেট এবং নতুন বাজারে দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ময়নাগুড়ি ট্রাফিক মোড় সহ বিভিন্ন জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। সকাল ৮টায় বনধ সমর্থনকারীদের একটি মিছিল বের হয়। বনধের সমর্থনে স্লোগান দিয়ে মিছিলটি ময়নাগুড়ি শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ভারত বনধের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মেটেলি ব্লকে। বনধকে কেন্দ্র করে মেটেলি ব্লকের বাতাবাড়ি ফার্ম মোড়ে সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। এদিন সকাল থেকেই বনধের সমর্থনে বাম ও কংগ্রেস নেতা কর্মীরা বাতাবাড়ি ফার্ম বাজারে পিকেটিং করে। এরপর একটি বড় মিছিল সমগ্র বাতাবাড়ি ফার্ম বাজার এলাকা পরিক্রমা করে। এদিন আটকানো হয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাসও। বাতাবাড়ি ফার্ম বাজারে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়৷ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মালবাজারের এসডিপিও দেবাশীষ চক্রবর্তী। এদিন পুলিশের সঙ্গে বনধ সমর্থনকারীদের সাময়িক কথা কাটাকাটি হয়। যদিও পরে তা মিটে যায়। এদিন জাতীয় সড়কে বসে পড়েন বনধ সমর্থনকারীরা। বাতাবাড়ি ফার্ম বাজারে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে বন্ধ সমর্থনকারীদের বচসা হয়। এছাড়াও এদিন মেটেলি বাজার, চালসা এলাকায় সকাল থেকেই পিকেটিং করেন বনধ সমর্থনকারীরা। চালসা, বাতাবাড়ি, মেটেলি, ধুপঝোরা, মঙ্গলবাড়ি, মাথাচুলকা এলাকায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল সমস্ত সরকারি অফিস। তবে মেটেলি ব্লকের বেশিরভাগ চা স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়।