টোটগাঁও: টোটগাঁওয়ে তিস্তার ভাঙন পরিদর্শনে এসে একাধিক ইস্যুতে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের সমালোচনায় সরব হল বিজেপির প্রতিনিধি দল। শুক্রবার টোটগাঁওয়ে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্ট তৃণমূল সরকারকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে একের পর এক তোপ দাগতে থাকেন। তৃণমূল নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে টেরর, মার্ডারার ও কাটমানির সরকার বলে অভিহিত করে দার্জিলিংয়ের সাংসদ বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কয়লা চুরি, গোরু পাচার, বালি চুরি সবেতেই এই রাজ্য সরকারের কেষ্টবিষ্টুরা জড়িয়ে রয়েছেন। তিস্তা থেকেও বিনা বাধায় বালি-পাথর চুরি করার ফলে খরস্রোতা নদীর তীব্র জলস্রোত এই মুহুর্তে গ্রামমুখী হয়ে পড়েছে। এই সরকার কাটমানির সরকার। এদের একমাত্র উদ্দেশ্য রাজ্যের উন্নয়নখাতের বরাদ্দ অর্থ নয়ছয় করে আমজনতার দুর্দশা বাড়িয়ে তোলা।’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘দিন আসছে। রাজ্যের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের স্বরূপ ধরে ফেলেছেন।’ ২০২৪ সালের লোকসভা এবং ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের মানুষ এর উচিত জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায় বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই মালের সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে টোটগাঁওতে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে এসেছি। কোনও কাজ হয়নি। শুনেছি অর্থাভাবে নাকি সেচ দপ্তরের পাঠানো বাঁধ তৈরির প্রস্তাব নবান্নের অনুমোদন এখনও পর্যন্ত পায়নি। যে রাজ্যে নেতা-মন্ত্রীদের ঘর থেকে কোটি কোটি চুরির টাকা উদ্ধার হয় সেখানে এর থেকে বেশি কি আর প্রত্যাশা করা যাবে।’ অবিলম্বে সেচ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু না হলে স্থানীয়দের সঙ্গী করে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ।
প্রসঙ্গত, গত বেশ কিছুদিন ধরেই তিস্তার ভাঙন নিয়ে সংবাদ শিরোনামে ছোট্ট এই কৃষিপ্রধান গ্রামটি। যদিও বেশকিছু ঘরবাড়ি সহ প্রচুর পরিমাণে কৃষিজমি ইতিমধ্যেই তিস্তা গ্রাস করে নিলেও এখনও তৃণমূলের কোনও নেতা বা মন্ত্রীর পা পড়েনি এখানে। যা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী বুলু চিকবড়াইক বলেন, ‘সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলে অবিলম্বে যাতে তিস্তার ওই অংশে বাঁধ নির্মাণের ছাড়পত্র পাওয়া যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ টোটগাঁওয়ের ভাঙন বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এদিন রাজু বিস্ট, জয়ন্ত রায় ছাড়াও শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষ টোটগাঁও পরিদর্শন করেন। কথা বলেন ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রাথমিক স্কুলের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে। বিজেপির প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত ৯টি পরিবারের হাতে বাড়ি বানানোর জন্য টিন এছাড়াও চাল, ডাল সহ খাদ্য সামগ্রী এবং প্রাথমিকভাবে পরিবারপিছু ৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ তুলে দেন। পরবর্তী সময়ে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে আরও ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে সাংসদ রাজু বিস্ট জানিয়েছেন।