প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লিঃ বিজেপির নবান্ন অভিযানে কর্মী সমর্থকদের উপরে হামলার ঘটনায় এবার রাজ্য পুলিশকে কাঠগড়ায় তুলতে চলেছে বিজেপির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার(JP Nadda) হাতে আগামী ২৪ তারিখ সকাল ১১ টায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট জমা করবে কেন্দ্রীয় বিজেপির তৈরি পাঁচ সদস্যের দলীয় কমিটি। সেখানে যেমন উল্লেখ থাকবে, মিনা দেবী পুরোহিত সহ আরো ৩৫ জন বিজেপি কর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা, তেমনই উল্লেখ থাকবে নবান্ন অভিযানের তিন চার দিন আগে থেকে কিভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপির কার্যকর্তাদের মিছিলে আসার জন্য বাধা দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে। এমনকি কর্মীদের করা একাধিক ধরপাকড়ের অভিযোগ ও লিপিবদ্ধ আছে কমিটির রিপোর্টে বলে সূত্রের খবর।
এই প্রসঙ্গে পাঁচ সদস্যের কমিটির অন্যতম প্রাক্তন আইপিএস এবং রাজ্যসভার সাংসদ ব্রিজলাল জানিয়েছেন, ‘আমাদের রিপোর্ট প্রস্তুত। সভাপতি নাড্ডা আগামী ২৪ তারিখ বেলা ১১ টায় আমাদের সময় দিয়েছেন। আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নাড্ডাজীর হাতে রিপোর্ট তুলে দেওয়ার পাশাপাশি, নবান্ন অভিযানের সংঘটিত বিজেপি কর্মীদের উপর বেনজির আক্রমণের যাবতীয় বৃত্তান্ত ব্যখ্যা করব।’ সাংসদ ব্রিজলাল আরো বলেন আমাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার দেওয়া আছে প্রত্যেকটি দেশবাসীকে। সেই জায়গা থেকে যেকোনো রাজনৈতিক দল নিজস্ব কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনের ডাক দিতেই পারেন। এটা আমাদের সংবিধানস্বীকৃত ব্যবস্থা। কিন্তু যেভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনরত কর্মীদের উপরে পুলিশি বর্বরতা নেমে এসেছে এবং মিছিল ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের পুলিশ যেভাবে বিজেপি কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করেছে, এমনকি পাথর ছুড়ে মেরেছে তা সাম্প্রতিক কালে বিরলতম ঘটনা। মহিলা থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষ প্রত্যেকের উপরে নির্বিচারে লাঠিচার্জ করা হয়েছে। দলের দীর্ঘদিনের কর্মী এবং কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর মীনা দেবী পুরোহিতের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। একাধিক বিজেপি কর্মী আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে থেকেছেন দীর্ঘক্ষন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু পর্যন্ত করা হয়নি। এই সমস্ত কিছুই বিস্তৃত আকারে রিপোর্টে থাকবে বলে জানিয়েছেন ব্রিজলাল।
প্রসঙ্গত বিজেপির নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে কলকাতা। কিন্তু বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সহ সমস্ত নেতারাই অভিযোগ করেছেন ১০-১১ এবং ১২ সেপ্টেম্বর সারা রাজ্য জুড়ে পুলিশ সমস্ত বিজেপি কর্মীদের মিছিলে না আসতে নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে ভয় দেখানো এমনকি সারারাত থানায় বসিয়ে পর্যন্ত রাখা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, ‘নবান্ন অভিযানের আগে সারা রাজ্য জুড়ে এক অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি করেছিল প্রশাসন। ১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যের কোনায় কোনায় পুলিশ প্রশাসন আমাদের কর্মীদের লাগাতার ভয় দেখাতে থাকে, যাতে তারা নবান্ন অভিযানে অংশগ্রহণ না করেন। এরপরেও যে সমস্ত কর্মীরা বাস বা ট্রেন ধরে কলকাতা দিকে আসার চেষ্টা করেছেন তাদের মধ্যে হাজার হাজার কর্মীকে ১২ তারিখ রাত্তিরে জোর করে থানায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কলকাতার নিকটবর্তী জেলা থেকে আসা আমাদের কর্মী বোঝাই বাসগুলিকে সকাল থেকেই জোর করে কলকাতায় ঢুকতেই দেয়নি রাজ্য পুলিশ।’
সুকান্ত এও বলেন, নবান্ন অভিযানে যে মানুষের ঢল রাস্তায় নেমেছিল তার অধিকাংশ ছিল সাধারণ মানুষ যারা সরকারের আকাশ ছোঁয়া দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে আমাদের সাথী হয়েছিলেন। এই সকল মানুষকে পুলিশ যেমন নির্মমভাবে মেরেছে তেমন ই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পাথর ছোড়া থেকে শুরু করে, অতিরিক্ত মাত্রায় জলকামান, এবং কাঁদানে গ্যাস ও প্রয়োগ করেছে। ৩৫ জনের উপর কর্মী পুলিশের মারে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রাথমিক আঘাত যে কতজনের লেগেছে তার কোন হিসাবই নেই। মাথা ফাটা থেকে শুরু করে হাত পা ভাঙ্গা পুলিশের লাঠি রেয়াত করেনি মহিলা থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত কাউকেই। কেন্দ্রীয় সভাপতি তৈরি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি নিজেরা এসে প্রত্যেকটি আহত মানুষের বাড়ি ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতি দেখে গেছেন। সংবাদ মাধ্যমের তোলা ফুটেজে পরিষ্কার পুলিশী নির্মমতার ছবি। এরপর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পুলিশকে উস্কানি দেওয়ার জন্য ঔদ্ধত্বে ভরা সেই বিখ্যাত উক্তি ‘আমি হলে মাথার মাঝখানে গুলি করতাম’, এই সমস্ত কিছুই রিপোর্টে প্রকাশিত হবে বলে আশাবাদী বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
আরও পড়ুনঃ বিধানসভায় অনুপস্থিত বেশ কিছু তৃণমূল বিধায়ক, দল এবার কী ব্যবস্থা নেবে?