বালুরঘাট: ভোট বাজারে রক্ত সংকটে জেরবার জেলার দুই হাসপাতাল। নেগেটিভ রক্তের ভাঁড়ার শূন্য। রবিবার বিকেল পর্যন্ত বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত ছিল মাত্র পাঁচ ইউনিট। গঙ্গারামপুর সদর হাসপাতালের পরিস্থিতিও এক। এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে মাত্র দুই ইউনিট। অন্য গ্রুপের রক্ত তখনও অমিল।
প্রবল গরমের মধ্যে শুরু হয়েছে ভোটের মরশুম। ঠিক এই সময়ই গোটা জেলায় রক্তের প্রচণ্ড অভাব দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবী দলগুলি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী রক্তের জোগান দিতে হিমসিম খাচ্ছে দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে একই ছাদের তলায় রয়েছে ব্লাড সেন্টার। সেখানে প্রতিদিনই রক্তের চাহিদাপত্র নিয়ে হাজির হন প্রচুর মানুষ। কেউ প্রসূতির জন্য, কারও দুর্ঘটনাজনিত কারণে রক্তের চাহিদা থাকে বেশি। সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হচ্ছে থ্যালাসিমিয়া রোগীদের। জেলায় একমাত্র এই হাসপাতালেই রয়েছে থ্যালাসিমিয়া কন্ট্রোল ইউনিট। সেখান থেকে প্রতি মাসে ৩৫০ থেকে ৪০০ জন রোগীকে রক্ত দেয় এই ব্লাড ব্যাংক। জেলার যে-কোনও প্রান্তের থ্যালাসিমিয়া রোগীকে রক্তের জন্য এখানেই ভর্তি হতে হয়। সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত তাঁদের রক্ত দেওয়া হয়। গঙ্গারামপুর সদর হাসপাতালেও রক্তের চাহিদা কম নয়।
কিন্তু জেলার মূল দুই হাসপাতালেই এখন কোনও নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত নেই। লোকসভা ভোটের আগে শিবির সেভাবে আয়োজিত না হওয়ায় এই অবস্থা বলে দাবি করছেন রক্তদাতারা। গরম বাড়তেই শিবিরে রক্তদাতার অভাব দেখা দিচ্ছে বলে আক্ষেপ তাঁদের। বিশেষ করে নেগেটিভ গ্রুপের রক্তদাতারা পিছিয়ে থাকেন। একমাত্র আপৎকালীন সময়েই তাঁরা রক্ত দান করেন। ফলে থ্যালাসিমিয়া রোগীরাই এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দুলাল বর্মন বলছেন, ‘গরম ও ভোটের জন্য এখন জেলায় রক্তের আকাল চলছে। থ্যালাসিমিয়া রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছেন। সবার মিলিত প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমস্যার কথা, চাহিদার অনুপাতে নতুন রক্তদাতা তৈরি হচ্ছে না।’
পথের দিশা সংস্থার কর্ণধার সৌরভ রায় জানান, ‘দুই হাসপাতালে রক্তের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। রোগীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে রক্তদাতা খুঁজে দিচ্ছি। বর্তমানে জেলায় তিন লক্ষ ৮৬ হাজার থ্যালাসিমিয়া বাহক রয়েছেন। জেলায় প্রায় ৫০০ জন থ্যালাসিমিয়া আক্রান্ত। রক্তদানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে এই সমস্যার সমাধান। করা দুরূহ।’