গাজোল: আগামীকাল রাজ্যে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ। প্রথম দফায় যে সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যান্য কেন্দ্রগুলিতে চলছে জোরকদমে প্রচার। ‘ভোট দিন, ভোট দিন’ স্লোগানে সরগরম গোটা এলাকা। গাজোলের চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামেও চলছে জোর কদমে প্রচার। দলমত নির্বিশেষে এলাকার আবালবৃদ্ধবনিতা শামিল হয়েছেন এই মিছিলে। তবে পার্থক্য একটাই ‘ভোট দিন’ এর পরিবর্তে এই মিছিলের স্লোগান ‘ভোট দিচ্ছি না দেব না’। টাঙন নদীর উপর ব্রিজ, নতুন রাস্তা তৈরি এবং নদী ভাঙন রোধের দাবিতে ভোট বয়কটের মিছিলে সরগরম চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম। এলাকার বাসিন্দাদের এই তিনটি মূল দাবি নিয়ে বহুবার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও এবং জেলা শাসকের কাছে দরবার করা হয়েছে। আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল কাজ হবে। কিন্তু কোন কাজই হয়নি। যার ফলে গ্রামবাসীরা যে অন্ধকারে ছিল সেই অন্ধকারেই রয়ে গিয়েছে। আর এরজন্য সমস্ত গ্রামবাসী একজোট হয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে। উন্নয়নের দাবিতে এলাকাজুড়ে চলছে মিছিল এবং পথসভা।
এলাকার গৃহবধূরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত হয়ে আছি। নদী ভাঙন, বেহাল রাস্তা এবং ব্রিজের সমস্যায় আমরা জর্জরিত। আমাদের অসুবিধার কথা আমরা বারবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। প্রত্যেকবারই আশ্বাস পেয়ে ছিলাম কাজ হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো কাজই হয়নি। যার ফলে চরম অসুবিধার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয় আমাদের। তাই সমস্ত গ্রামবাসী মিলে আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিধানসভা নির্বাচনে ভোট বয়কট করব আমরা। চাকনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বৈরডাঙ্গী, কদুবাড়ি, মাথামোড়া এবং ডোবাখোকসান বুথে ভোট বয়কট করা হবে। শুধু ভোট বয়কটই নয়, ওই সমস্ত বুথে আমরা তালা মেরে রাখবো। ভোট কর্মীদেরও গ্রামে ঢুকতে দেবো না। নির্বাচনের পর আমরা সমস্ত গ্রামবাসী দলবদ্ধ হয়ে বিডিও অফিস ঘেরাও করব। দরকার হলে বসে পড়বো রাস্তায়।’
গ্রামবাসীরা জানালেন, ভালো মতো রাস্তাঘাট না থাকায় গাজোল শহর এলাকায় আমরা যেতে পারি না। কিন্তু তবুও বাধ্য হয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজের জন্য আমাদের গাজোল যেতে হয়। আর্দুইনো দিন কাজের জন্য নদী পেরিয়ে যেতে হয় নালাগোলা হয়ে পাকুয়া, বুনিয়াদপুর, ডীটল কিংবা গঙ্গারামপুর। বর্তমান সময়ে নদী পার হওয়ার জন্য একটি বাঁশের ব্রিজ করা হয়েছে। সেই ব্রিজ দিয়ে নদী পার হতে গেলে দিতে হয় মাথাপিছু ৫ টাকা। সাইকেল নিয়ে গেলে দিতে হয় ১০ টাকা আর মোটর সাইকেল নিয়ে গেলে দিতে হয় ২০ টাকা। এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এই ব্রিজের উপরে নির্ভরশীল। প্রতিবার যাতায়াত করতে গেলে যাতায়াতের জন্য খরচ হয়ে যায় বেশ কিছু টাকা। তাই আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি আমাদের এই এলাকায় টাঙন নদীর উপর একটি ব্রিজ তৈরি করা হোক। এছাড়াও রাস্তাঘাটের হাল খুব খারাপ। বর্ষার সময় যাতায়াত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাস্তার জন্য স্কুলে মাস্টার মশাইরা আসতে পারে না। লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয় ছাত্রছাত্রীরা। এর আগে বেশ কয়েকবার সমস্ত বিষয় নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও এবং জেলা শাসকের কাছে আমরা আবেদন জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যার ফলে বাধ্য হয়ে সমস্ত এলাকাবাসী এক হয়ে এই চারটি বুথে ভোট বয়কট এর ডাক দিয়েছে। এবার আমরা কেউই বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতে যাব না। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গ্রামবাসীরা এককাট্টা। ভোট বয়কটের পক্ষে এলাকায় এলাকায় চলছে মিছিল এবং সভা। এই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার সমস্ত মানুষ। আমাদের দাবি পূরণ না হলে এই আন্দোলন চলতেই থাকবে।’