তমালিকা দে, শিলিগুড়ি : শুধু জনজীবনের ছন্দ নষ্ট করাই নয়, শুভদৃষ্টিতেও ভিলেন হয়ে দেখা দিল করোনা ভাইরাস। ইতিমধ্যেই কোভিড ১৯-এর আতঙ্কে ছাঁদনাতলা যাওয়া বাতিল করেছেন শহরের অনেক পরিবার। বিশেষ করে বৈশাখে যাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তাঁরা বিয়ে পিছিয়ে দেওয়ার কথা ডেকোরেটার থেকে মেকআপ আর্টিস্ট, ফোটোগ্রাফারদের জানিয়ে দিচ্ছেন। পরিস্থিতি বুঝে বিষয়টিতে সম্মতি দিয়েছেন তাঁরাও। করোনার থাবায় এই সিদ্ধান্ত ছাড়া যে অন্য কোনও উপায় নেই, তা অবশ্য পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে।
বৈশাখ মানেই বিয়ের হিড়িক। কার্ড থেকে শুরু করে শাড়ি, গয়নাগাটি কেনা সবকিছুই যেন এক-দুমাস আগে থেকে শুরু হয়ে যায়। তবে করোনা ভাইরাসের সতর্কতার জন্য দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। যার ফলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্য সমস্ত দোকানপাট। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউন থাকবে। এদিকে, বৈশাখের প্রথম বিয়ে তারিখ রয়েছে ১৫ এপ্রিল। যার ফলে একদিকে যেমন বিয়ে নিমন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, অন্যদিকে অতিথিদের জন্য খাবারের আয়োজনের ক্ষেত্রেও সমস্যা আছে।
তবে, এই সমস্যা যে শুধু যাঁদের বাড়িতে বিয়ে তাঁদের রয়েছে তা নয়, করোনা ভাইরাসের জন্য বিয়ে মণ্ডপসজ্জার কর্মচারী ও সামগ্রী নিয়ে চাপে রয়েছেন ডেকোরেটার্স ও ক্যাটারার ব্যবসায়ীরাও। ভক্তিনগরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার শালার বিয়ে ছিল ২৭ মার্চ। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য বিয়ে আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। কারণ, এই সময় একেই দেশজুড়ে লকডাউন চলছে। তাই পাত্র ও পাত্রীপক্ষ একসঙ্গে আলোচনা করেই বিয়ে স্থগিত রাখা হয়েছে। একই পরিস্থিতিতে পড়েছেন সুভাষপল্লির বাসিন্দা মাম কর-ও। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের জন্য আমার মামার বিয়ে স্থগিত রাখা হয়েছে। এপ্রিল মাসে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এখন লকডাউন চলছে। তাই এত কম সময়ে মধ্যে আয়োজন করাও সম্ভব নয়। সবকিছুর দিকে খেয়াল রেখেই দুই বাড়ি থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মেকআপ আর্টিস্ট লিপি পাল ভাওয়াল বলেন, এপ্রিলে বিয়ে রয়েছে এমন অনেক কনেই বিয়ের সাজের জন্য অ্যাডভান্স বুকিং করেছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের আতঙ্কের জেরে বিয়ে পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে ইতিমধ্যেই অনেকে ফোন করে জানিয়েছেন। তবে পরিস্থিতির জন্যই তাঁরা এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বুঝতে পারছি। একই কথা জানান ডেরোরেটার সুব্রত দাস। তিনি বলেন, প্রধাননগর, দেশবন্ধুপাড়া, শক্তিগড় থেকে যাঁরা বিয়ে মণ্ডপসজ্জা, ক্যাটারিং-এর জন্য অর্ডার দিয়েছিলেন, তাঁরা ইতিমধ্যেই বিয়ে স্থগিত করেছেন। শুধু এই অবস্থা আমারই নয়, আমার মতো অনেক ডেকোরেটারকে ফোন করে এপ্রিল মাসে যাঁদের বিয়ে তাঁরা স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছেন। জানি না কবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।