নাগরাকাটা: ক্ষুদ্র চা চাষিদের জন্য ‘ভয়েস অফ পাওয়ার’ নতুন প্রকল্প শুরু হতে চলেছে। দেশের অন্যতম চা বণিকসভা ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশন(আইটিএ), ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা ও হল্যান্ডের একটি প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক সংস্থা সলিডারিটিয়েট-এর যৌথ উদ্যোগে ‘ট্রিনিটি’ নামে একটি কর্মসূচির মাধ্যমে ভয়েস অফ পাওয়ার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে জলপাইগুড়ির(Jalpaiguri) ক্ষুদ্র চা চাষিদের বাগানে গড়ে উঠবে কার্বন ব্যাংক। শুধু তাই নয়। ক্ষুদ্র চা চাষিদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী পরিচালিত ময়নাগুড়ির জয় জল্পেশ বটলিফ ফ্যাক্টরির উৎপাদনকে ব্র্যান্ডিং করে বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে জলপাইগুড়ির ক্ষুদ্র চা চাষিদের বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে হর্টিকালচার, ফ্লোরিকালচার, অ্যাকোয়াকালচারে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াস হাতে নিয়েছে টি বোর্ড।
গত সোম ও মঙ্গলবার এই দু’দিন ধরে কলকাতায় আলাদাভাবে আয়োজিত ট্রিনিটি ও টি বোর্ডের সঙ্গে জলপাইগুড়ির ক্ষুদ্র চা চাষিদের বৈঠকে এমন নানা সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে। জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয় গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘বাগানে কার্বন ব্যাংক না থাকলে আগামীতে দেশ কিংবা বিদেশ কোনও বাজারেই সেই চায়ের কদর থাকবে না। এটা এখন শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও চায়ের ভবিষ্যত কিন্তু অন্যরকম। ট্রিনিটি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ক্ষুদ্র চা চাষিদের বাগানে সেই কার্বন ব্যাংকই গড়ে উঠবে।‘
এই নয়া ধারনাটি ঠিক কী? সংশ্লিষ্ট সূত্রেই জানা গিয়েছে, কার্বন ব্যাংকের মাধ্যমে নতুন করে বৃক্ষসৃজন হবে। সেটা চা গাছ, ফল-ফুল কিংবা লেবু-গামারি-সেগুনের মতো অর্থকরী গাছও হতে পারে। যত বেশি গাছ তত বেশি কার্বনের সঞ্চয়। চা গাছে এমনিতেই কার্বন সঞ্চয়ের হার বেশি। এর সঙ্গে অন্যান্য গাছ গাছালি যুক্ত হলে সেই পরিমাণ আরও বাড়বে। ড্রোনের মাধ্যমে কার্বন ব্যাংক গড়ার ক্লাস্টার ঠিক করে শুরু হবে বৃক্ষসৃজন। বিজয় গোপাল জানান, যার যত বেশি কার্বন ব্যাংক তাঁর চায়ের চাহিদাও তত বেশি হবে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বান্ধব চা উৎপাদনে এই নয়া ধারণা যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
ট্রিনিটি প্রকল্পটি ৩ বছর ধরে চলছে। আইটিএ-র মতো কুলীন চা বণিকসভার এতে যুক্ত হওয়ার কারণ ক্ষুদ্র চা চাষিদের উৎপাদিত কাঁচা পাতা এখন বড় বাগানগুলিও কেনে। সেকারণে ক্ষুদ্র চাষিদের উৎপাদনের গুনগতমান বাড়লে আখেরে লাভবান হবে সংগঠিত ক্ষেত্রের চা শিল্পই। অর্থাৎ বড় বাগানগুলি। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও কলকাতার বৈঠকে হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন আইটিএ-র চেয়ারম্যান নয়ণতারা পাল চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিত রাহা, ট্রিনিটি প্রকল্পের পক্ষে সলিডারিটিয়েটের সিইও শতদ্রু চট্টোপাধ্যায়, টি বোর্ডের নির্দেশক (প্ল্যান্টেশন) এস সুন্দররাজন প্রমুখ।
অন্যদিকে, কাঁচা পাতার দাম না পাওয়ার বিষয়টিকে নিয়ে এদিন টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৌরভ পাহাড়ির সঙ্গে দেখা করেন জলপাইগুড়ির ক্ষুদ্র চা চাষিদের প্রতিনিধিরা। সেখানে চেয়ারম্যান তাঁদের জৈব চাষের ওপর জোর দেওয়ার আর্জি জানান। চাষিদের চা বাগানে হর্টিকালচারের বিকল্প সম্ভাবনার কথা উঠে আসে। ঠিক হয়েছে আগামী জুলাই মাসে জলপাইগুড়িতে টি বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের উপস্থিতিতে এব্যাপারে একটি আলোচনা সভা হবে। তাতে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হবে রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব ও হর্টিকালচারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ডঃ সুব্রত গুপ্তকে। সেখানে নিরাপদ চা উৎপাদনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আগামীতে ট্রিনিটি প্রকল্পের মাধ্যমে একটি ট্রেসেবিলিটি অ্যাপও আসতে চলেছে। ওই অ্যাপের মাধ্যমে কোথাকার ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাঁচা পাতা কোথায় যাচ্ছে তা পরিষ্কার বোঝা যাবে। পাশাপাশি জলপাইগুড়ির ক্ষুদ্র চা চাষিদের জন্য মাটি পরীক্ষা, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ওয়েদার স্টেশন, ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক স্প্রে-র মতো একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। উত্তরের জলপাইগুড়ি ছাড়াও ট্রিনিটি-র আওতায় থাকছে অসমের জোড়হাট, তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও উদালগুড়ি এবং তামিলনাড়ুর নীলগিরীর চাষিরা।