কলকাতা: বাংলায় করোনা জোন চিহ্নিত করাকে কেন্দ্র করে নবান্ন-নয়াদিল্লি তরজা তুঙ্গে৷ রাতারাতি রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলাকে রেড জোন ঘোষণা করায় কেন্দ্রের উপর বেজায় চটেছে রাজ্য সরকার৷ প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রকে চিঠিও দিল মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা স্বাস্থ্য দপ্তর৷
করোনা সংক্রমণের মাত্রা বোঝাতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিকে রেড, গ্রিন ও অরেঞ্জ জোনে ভাগ করা হয়েছে। তবে, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের তরফে প্রকাশিত জোনের দুই রকম তালিকা নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে উত্তরবঙ্গের চার জেলা ‘রেড জোনে’পরিণত হয়৷ অরেঞ্জ জোন থেকে এক রাতে রেড জোন হয়ে যায় দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং মালদা৷ ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় পরিবার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সচিব প্রীতি সুদানের রাজ্যগুলিকে পাঠানো চিঠি থেকে এই তালিকা প্রকাশ হয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার এই তালিকা প্রকাশ হতেই হইচই পড়ে যায় রাজ্য প্রশাসনিক মহলে৷
কিন্তু রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের তরফে বৃহস্পতিবারই সেই তালিকার বিরোধিতা করে কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের কাছে পালটা চিঠি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, রেড জোন নিয়ে ভুল করেছে কেন্দ্র৷ রাজ্য সরকারের তালিকা অনুযায়ী, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম গ্রিন জোনে আছে। অন্যদিকে, কালিম্পঙ, জলপাইগুড়ি, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দার্জিলিং, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা রয়েছে অরেঞ্জ জোনে। রেড জোনে রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা।
বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর সবুজ জোনে ছিল৷ দার্জিলিং, কালিম্পং, মালদা এবং জলপাইগুড়ি জেলা ছিল অরেঞ্জ জোনে৷ কিন্তু শুক্রবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে নতুন একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে৷ তাতে দেখা যাচ্ছে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং এবং মালদাকে রেড জোন বলে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এই সব এলাকায় রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয়৷
সাময়িক স্বস্তির পর বৃহস্পতিবারে ফের চিন্তা বাড়িয়ে দেয়৷ ওইদিন গ্রিন জোনে থাকা আলিপুরদুয়ারে চারজনের শরীরে মেলে করোনা ভাইরাস৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই খবর জানান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ পুরণ শর্মা৷ স্বাভাবিকভাবেই গ্রিনজোনে থাকা আলিপুরদুয়ারে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে, কেন্দ্রের তালিকা অনুয়াযী আলিপুরদুয়ার এখনও গ্রিন জোনেই রয়েছে৷
জানা গিয়েছে, ওই চার জন কয়েকদিন আগে দিল্লীর এইমস থেকে চিকিৎসা করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আলিপুরদুয়ারে আসেন। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে আসার পরেই রাস্তায় ওই অ্যাম্বুলেন্সটিকে আটকে দেয় পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপ্তর। তার পর অ্যাম্বুলেন্স থেকে আটক চারজনকে কোয়ারান্টিনে পাঠানো হয়। কোয়ারান্টিন সেন্টার থেকেই ওই চারজনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ওই চারজনের রিপোর্ট স্বাস্থ্য দপ্তরের হাতে আসে। ওই রিপোর্টেই চার জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন কোচবিহার জেলার বাসিন্দা। অন্য দুজন আলিপুরদুয়ার জেলার বাসিন্দা। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে চায়নি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে চার জনের নমুনায় কোভিড-১৯ পাওয়া গেছে তা স্বীকার করেছেন জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা।
কেন্দ্রের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাংলার রেড জোনে পড়েছে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তরবঙ্গের ওই চার জেলা৷ কেন্দ্রের তালিকায় অরেঞ্জ জোনের জেলাগুলি হল, হুগলি, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ৷ আর সবুজ জোনের জেলা হল, উত্তর দিনাজপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া, আলিপুরদুয়ার এবং ঝাড়গ্রাম৷