নয়াদিল্লি: দ্রুত জট কাটতে চলেছে ১০০ দিনের প্রকল্পের (100 days work)। সোমবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের (Giriraj Singh) সঙ্গে বৈঠক সেরে এমনই দাবি জানালেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা প্রদীপ মজুমদার। এদিন বঙ্গ ভবনে, সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রদীপবাবু বলেছেন, ১০০ দিনের কাজে বকেয়া অর্থ মেটানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং স্বয়ং তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। ফলে খুব দ্রুত কাটতে চলেছে এই ‘মনরেগা’ বিষয়ক ‘অচলায়তন’।
প্রসঙ্গত, গত ১০ মাসে প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে পাওনা বকেয়া আছে রাজ্যের। দীর্ঘ দিন ধরে এই টাকা পাওয়ার জন্য তদবির করেছিল রাজ্য। এমনকি তৃণমূলের লোকসভা দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিশেষ প্রতিনিধি দল দিল্লি এসে সাক্ষাৎ করেছিল গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গেও। রাজ্যের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্রে দাবি, পঞ্চায়েত স্তরে টাকা খরচের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ‘অস্পষ্টতা’ ও ত্রুটি আছে বলে জানায় কেন্দ্রীয় সরকার। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তরফে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের কাছে বেশ কিছু নথি চেয়ে পাঠানো হয়। রাজ্য প্রশাসনের তরফে বলা হয়, সমস্ত নথি কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়েছে। এরপরেই এদিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে মুখোমুখি হন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। বৈঠকের শেষে তিনি বলেন, ‘খুবই ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সব কথা শুনে আশ্বস্ত করেছেন যাতে দ্রুত এই টাকা বরাদ্দ করা হয়।’ প্রদীপবাবু জানান, মনরেগায় ১০০ দিনের কাজে প্রায় ৬৭৬৪ কোটি টাকা বকেয়া রাজ্যের। এছাড়াও ২২-২৩ বছরের গ্রামীণ আবাস যোজনার টাকা আটকে আছে। এমনকি গ্রামীণ সড়ক যোজনার প্রস্তাবিত ২২৬ কিমি রাস্তার কাজও আছে আটকে।’ তবে এদিনের বৈঠকের পর সে সব জটিলতা নিরসন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী।
প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘কয়েকটি প্রথাগত ত্রুটির কথা তুলেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা আগেই চিঠি দিয়ে বলেছি। হয়তো কিছু সমস্যা ছিল, সব নির্ভুল হতে পারে না। কিন্তু আমরা যথাযথ তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠিয়েছি। তারপরও কেন আটকে ছিল টাকা বুঝিনি। প্রাপ্য অর্থের আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তাতেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে আজ মনে হচ্ছে, সব মেঘ কেটে গিয়েছে। আমার ধারণা, সমস্যা মিটে যাবে।’ তিনি এও জানান, এ বিষয়ে প্রথমে সচিব-স্তরে আলোচনা হয়েছে। পরে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় আশঙ্কার নিরসন করা গিয়েছে। মন্ত্রীর সুস্পষ্ট ধারণা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করছি, সুফল পাওয়া যাবে।’
তিনি এও বলেন, মাঝে মাঝেই আলোচনা হবে কেন্দ্র-রাজ্য বিষয়ে। গিরিরাজ সিং কয়েকটি পৃথক প্রকল্পের কথাও বলেছেন। দেশি খেজুরের চাষ, তালের রস নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা আশ্বস্ত করেছি, টাকা পেয়ে কাজ শুরু হলে প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন সম্ভব। রাজ্য সবরকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
একদিকে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যখন রাজ্যের ১০০ দিনের কাজের জট কাটাতে উদ্যোগী রাজ্য পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, তখন অন্যদিকে, একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠকের দিনই রাজ্যে পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীকেই চিঠি লিখলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনগণের মন জয় করতে ভুয়ো কর্মসংস্থান তৈরি করছে রাজ্য। রাজ্যের শাসক দলের দুর্নীতি রোধ করতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন : রাজ্যসভার সংসদীয় কমিটিতে গুরুত্ব বাড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের