বীরপাড়া : ছটপুজোর জন্য কমপক্ষে কোমর পর্যন্ত জল চাই। কিন্তু মাদারিহাটের অনেক নদীই এখন খটখটে শুকনো। তাই, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের ছটপুজোর কমিটিগুলিকে নদীর বুক খুঁড়ে জল খুঁজতে হচ্ছে। যাঁরা পুজো দিতে আসবেন, তাদের কাছে নদী খননের খরচ বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছটপুজো পরিচালনার কর্মকর্তারা।
মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকে প্রচুর নদী থাকলেও গ্যারগান্ডা, পাগলি, তিতি, বাংরি, হাউরি, ডিমডিমার মতো অনেক নদীতে জল থাকে কেবলমাত্র বর্ষাকালেই। ফলে, অক্টোবর নভেম্বর মাসে ছটপুজোর সময় নদীগুলি শুকিয়ে যায়। পুজোর আগে নদী খুঁড়ে জল বের করতে হয়।
এথেলবাড়িতে ছটপুজোয় কয়েক হাজার পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। কিন্তু ডিমডিমা নদীতে জল নেই। এথেলবাড়ির বাসিন্দা সম্পাদক রাজেশ সিং বলেন, ‘এ বছর ছটপুজোর জন্য ডিমডিমা নদীর বুকে আর্থমুভার লাগিয়ে জল বের করতে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।’ বীরপাড়ার ছটপুজো কমিটির সভাপতি মুকেশ গুপ্তা বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা এভাবেই শুকনো গ্যারগান্ডা নদী খুঁড়ে জল বের করে ছট পুজোর আয়োজন করছি। দু’টি আর্থমুভার লাগানো হয়েছে। এজন্য খরচ হবে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।’
মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের ছটপুজোগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয় বীরপাড়ার অদূরে গ্যারগান্ডা নদীর তীরে । অথচ, এই নদীতে জল নেই। তাই, আগেভাগেই নদী খোঁড়ার শুরু করে দিয়েছে বীরপাড়া ছটপুজো কমিটি । কমিটি সূত্রে জানানো হয়েছে, নদীর বুকে তৈরি করা কৃত্রিম নদীর দু’পাশে তৈরি করা হবে এক হাজার ঘাট ।
মাদারিহাটের নদীগুলি সম্পর্কে রাঙ্গালিবাজনার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মনতোষ চন্দ বলেন, ‘মাদারিহাটের কিছু নদীতে বরাবরই বর্ষা ছাড়া জল থাকে না। তবে, ভুটানের মাইনিংয়ের জন্য নদীগুলির চরিত্রও পালটে যাচ্ছে। নদীবক্ষে জমছে বালি, বজরির স্তূপ। অল্প বৃষ্টি হলেই হড়পা হচ্ছে।’
মাদারিহাট বীরপাড়া ব্লকের নদীগুলির চরিত্র পালটে যাওয়ার পিছনে ভুটানের মাইনিংকে দায়ি করেছেন স্থানীয়দের অনেকেই। তাঁদের অভিযোগ, ভুটানে অবৈজ্ঞানিকভাবে পাহাড় ভেঙে পাথর, ডলোমাইট বের করা হচ্ছে । ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে বালি, বজরি জমা হচ্ছে মাদারিহাটের নদীগুলির বুকে। এছাড়া, হড়পায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বিপুল বালি, বজরিও জমছে নদীর বুকে। ধীরে ধীরে নদীগুলি স্বাভাবিক জলধারাই হারিয়ে ফেলছে।
ছবি – ছটপুজোর জন্য গ্যারগান্ডা নদীর বুকে আর্থমুভার লাগিয়ে জল বের করা হচ্ছে ।
তথ্য ও ছবি- মোস্তাক মোরশেদ হোসেন