নয়াদিল্লি: সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে পা রাখতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) আহ্বানে সাড়া দিয়ে জি-২০ শিখর সম্মেলন নিয়ে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নিতে মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি আগমন। রাজ্য প্রশাসনিক সূত্রে জারি মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি অনুযায়ী, সোমবার বেলা ১২.৩০ টায় কলকাতা থেকে চার্টাড ফ্লাইটে বেলা ৩টে নাগাদ দিল্লি পৌঁছোবেন মমতা, পরে দিল্লি বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি রাষ্ট্রপতি ভবন কালচারাল সেন্টারে ‘জি-২০ সুপ্রিমেসি’র সর্বদল বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি। জি-২০ বৈঠক কেন্দ্র করে সাজো-সাজো রব পড়েছে দিল্লিতেও। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি ভবনে চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। সেজে উঠেছে রাষ্ট্রপতি ভবন, নর্থ ও সাউথ ব্লক সমন্বয়ে রাইসিনা হিলসও।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৯-১০ সেপ্টেম্বর ভারতে আয়োজিত হতে চলেছে জি-২০ সামিট। সম্প্রতি ১ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর সভাপতিত্ব করার ভার নিয়েছে ভারত। ইন্দোনেশিয়ায় জি-২০ সামিটের সমাপ্তিপর্বে উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে পরবর্তী জি-২০ সামিটের সভাপতিত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় যা ভারতের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ। সেই বৈঠকের প্রেক্ষিতে গোটা বছর ধরে দেশের ৫০ টি শহরে ২০০-এর বেশি অধিবেশন আয়োজিত হবে। এই বিপুল আয়োজনের গুরুত্ব মাথায় রেখেই, সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে সর্বদলীয় বৈঠকে বসতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি।
কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ও আঞ্চলিক, ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৪০ টি রাজনৈতিক দলের কাছে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, দেশের সিংহভাগ রাজনৈতিক দলের শীর্ষ প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন সোমবারের বৈঠকে। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়গে, সিপিএম এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই-এর ডি রাজা, ডিএমকে সুপ্রিমো স্ট্যালিন, বিজেডি চিফ ও ওড়িশা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক, আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব অন্যান্য একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অংশ নেবেন সোমবারের বৈঠকে৷ কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রূপে, কালকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-সহ উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শা, তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ সিং ঠাকুর, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গয়েল প্রমুখ। সোমবার জি-২০ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন সাফল্যমণ্ডিত করতে সকলের সহযোগিতা এবং পরামর্শ চাইবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জি-২০ সামিটের দায়িত্ব ভারত পেলেও তা পূরণ করা এতটা সহজসাধ্য নয়। বরং তা যথেষ্টই চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের অধিকাংশরা। গত কয়েক মাসে, জি-২০ গোষ্ঠীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্ব মহলেই। অভ্যন্তরীণ ফাটল ক্রমে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সভাপতিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ভারতের প্রথম কাজ হবে এই বিভেদ দূর করা। ভিন্নমতের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ করতে হবে মোদি সরকারকে। ভারতকে এমন কিছু নীতি তৈরি করতে হবে, যেগুলির বিষয়ে সকল সদস্য দেশ ঐক্যমত হতে পারে। জলবায়ু ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়নের ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দিতে হবে ভারতকে। মাঝারি ও নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে পুনর্নবিকরণযোগ্য শক্তি প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে হবে উন্নত দেশগুলিকে। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। আইএমএফ, ডব্লিউটিও-র মতো অর্থনীতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামগুলির সঙ্গে যৌথভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে ভারতকে। এছাড়া, অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে একটি জি-২০-র নীতি নির্ধারণের মতো চ্যালেঞ্জ।
ইতিমধ্যেই ভারত সরকার জানিয়েছে, ভারতের জি-২০ সভাপতিত্বের অগ্রাধিকারগুলি হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল বৃদ্ধি, মহিলাদের ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তি-সক্ষম উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়ন, বৈশ্বিক খাদ্য এবং শক্তি সুরক্ষা। এর পাশাপাশি জি-২০ প্রেসিডেন্সি ভারতকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়গুলিতে বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে অবদান রাখার জন্য এক অনন্য সুযোগ করে দেবে বলে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এই সুযোগ ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্বদানকারীর ভূমিকায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা প্রধানমন্ত্রীর ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’তে পরিণত করার আহ্বান সফল করার দিকে এগিয়ে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, এই ফোরামের সভাপতিত্ব বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নততর করারও দারুণ সুযোগ। ভবিষ্যতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সমর্থন পেতে সুবিধা হবে ভারতের। সোমবার সমবেত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ‘পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’ (পিপিটি) এর মাধ্যমে তা ব্যক্ত করবেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, বিশ্বস্ত সূত্রে এমনই দাবি। দেখার বিষয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদীর সামনে কী প্রস্তাব তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় বৈঠকে বসার পাশাপাশি মঙ্গলবার আজমের শরীফ ও পুস্কর যাত্রা ছাড়াও বুধবার সংসদীয় অধিবেশন ভিত্তি করে সংসদীয় দলের বৈঠকেও অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা ফিরবেন মুখ্যমন্ত্রী।