সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : জলপাইগুড়ি শহরের হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে দেদার তামাকজাত দ্রব্য বিকোচ্ছে। কয়েকমাস আগে সরকার থেকে এই সমস্ত এলাকায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি এবং সেবন বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রচার চালানো হয়েছিল। সেই সময় কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছিল ব্লু লাইন। কিন্তু চারমাস পার হতেই ব্লু লাইন ফিকে হয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে চিহ্নিত এলাকাগুলিতে তামাকজাত নেশার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। যদিও এই ব্লু লাইন কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দাবি, যেসব এলাকা ব্লু লাইন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল সেসব এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চলছে।
২০০৩ সালের সিগারেট অ্যান্ড আদার টোবাকো প্রোডাক্ট অ্যাক্ট অনুয়াযী কোনো হাসপাতাল বা স্কুল-কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে ধূমপান এবং তামাক সেবন আইনত অপরাধ। যদিও অভিযোগ, এই আইন শুধু খাতায়-কলমেই ছিল। এর আগে কয়েকবার জলপাইগুড়ি শহরের জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে ধূমপান এবং এমন প্রতিষ্ঠানের বাইরে তামাকজাত সামগ্রীর বিক্রি রুখতে স্বাস্থ্য এবং পুলিশের তরফে যৌথ অভিয়ান চালানো হলেও তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়নি। অপরদিকে ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, এমন প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ গজ কতটা দূরত্ব তা অনেকের কাছে পরিষ্কার নয়। চলতি বছর জুলাই মাস নাগাদ ওই প্রতিষ্ঠানগুলির ১০০ গজের মধ্যে তামাক সেবন এবং বিক্রি বন্ধের লক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ব্লু লাইন কর্মসূচি গ্রহণ করে। সেই সময় জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। কলেজ থেকে ১০০ গজ কতদূর পর্যন্ত হয় তা মাপজোখ করে নীল রংয়ে রেখাও টেনে দেওয়া হয়।
কর্মসূচি শুরুর দিন ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হয়। পাশাপাশি, এলাকার য়ে ব্যবসাযীরা তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করে তাদেরও এই ধরনের সামগ্রী বিক্রি বন্ধ করার বিষয়ে সচেতন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালকে ব্লু লাইন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছিল। এরপরে কয়েকদিন নিয়মিত নজরদারি চালানো হলেও পরবর্তীতে তা কার্যত বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, নজরদারি কমে যাওয়ায় ফের এই এলাকাগুলিতে রমরমিয়ে সিগারেট এবং অন্য তামাকজাত সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালের ১০০ গজের মধ্যে থাকা কিছু দোকানের সামনে কেক, বিস্কুট, চকোলেট এবং পানীয় জলের বোতল সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। দোকানের ভেতরে তামাকজাত দ্রব্য মজুত থাকছে। পড়ুয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ গিয়ে চাইলে দোকানের ভেতর থেকে তা বের করে দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জলপাইগুড়ি শহরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক পার্থ বিশ্বাস বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক বিক্রি বন্ধ নিয়ে একাধিকবার নির্দেশিকা এবং অভিযান হলেও বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারের ঘোষিত ব্লু লাইন কর্মসূচিও ডাহা ফেল। আমরা শুনেছি একটি নির্দেশিকা জারি হয়েছে যেখানে ৭ নভেম্বর থেকে বাজারে তামাকজাত সামগ্রী এবং পানমশলা বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সরকারের সেই নির্দেশিকা কতটা কার্যকর হয় এখন সেটাই দেখার। অন্যদিকে, জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বাইরে তামাকজাত সামগ্রী বিক্রি বন্ধের বিষয়ে আমাদের সচেতনতা শিবির নিয়মিত চলছে। সেইসঙ্গে আমাদের আধিকারিকরা পুলিশ ও প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল এলাকার দোকানগুলিতে অভিযান চালাচ্ছেন।