শিলিগুড়ি : ঘরে-বাইরে কোন্দল সামলাতে দার্জিলিং জেলা সিপিএমের ইতিমধ্যেই নাজেহাল অবস্থা। তার মধ্যে শিলিগুড়ি(Siliguri) হকার্স কর্নারে দলের শ্রমিক সংগঠন সিটুর কার্যালয় বেসরকারি হাতে তুলে দিয়ে দল ফের বিতর্কের মুখে। শুধু বেসরকারি হাতে দেওয়াই নয়, প্রায় ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যে কমরেডরা বুকে আগলে রেখেছিলেন শ্রমিক সংগঠনের অফিস, বর্তমান নেতাদের একাংশ তা রীতিমতো বিক্রি করে দিলেন। এনিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।
কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? দলের জেলা সম্পাদক তথা সিটুর জেলা সম্পাদক সমন পাঠকের কাছে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। প্রাক্তন জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারও পরিষ্কারভাবে কোনও উত্তর দিতে পারেননি। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, অনেকদিনের পুরোনো অফিস। তবে আমি বিক্রি নিয়ে কিছু জানি না। দলে এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না সেটাও বলতে পারব না। বর্তমানে আমি কলকাতায় আছি। তবে অবশ্যই খোঁজ নেব।
সাতের দশকের শেষের দিকে শিলিগুড়ি হকার্স কর্নারে তৎকালীন সিপিএম নেতা উপেন দাস, উপেন্দ্রচন্দ্র পালদের উদ্যোগেইএই পার্টি অফিস তৈরি হয়েছিল। তাঁরা যতদিন জীবিত ছিলেন, হকার্স কর্নারে থাকা ওই পার্টি অফিস রীতিমতো গমগম করত। কিন্তু তাঁদের অবর্তমানে সেভাবে আর কমরেডরা পার্টি অফিসে আসতেন না। এই পরিস্থিতিতে নেতারা ওই পার্টি অফিসই বিক্রি করে দিলেন। অভিযোগ, এই নিয়ে দলের অন্দরে তেমনভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। জেলা কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ, দলের সভায় একবার শুধু বিষয়টি নিয়ে কথা উঠেছিল। কিন্তু তা বেশিদূর এগোয়নি। কীসের চুক্তিতে ওই অফিস বিক্রি হল, কত টাকা পাওয়া যাবে? পার্টি অফিস আদৌ সেখানে থাকবে কি না, সেই ব্যাপারে ওই বৈঠকে কোনও বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি।
দলের অন্দরেই খবর, সিটুর চারজন নেতা মিলে এই চুক্তি করেছেন। যাঁরা বর্তমান সিটু অফিস ভেঙে দোতলা ঘর বানিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা সেখানে যে দোকান বানাবেন সেই দোকান বিক্রির টাকা পার্টি ফান্ডে যাবে কি না সেই বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সমন পাঠকের কথায়, সিটু অফিস বিক্রি হয়নি। ওঁদের সঙ্গে একটা চুক্তি হয়েছে। ওঁরা ওখানে দোতলাটা আমাদের দেবেন। নীচের তলায় ওঁরা দোকান করবেন। তবে আমরা কতটা অংশ পাব তা এখনও ঠিক হয়নি। এই নিয়ে কয়েকজন সিটু নেতাকে নিয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই অফিসের বিনিময়ে টাকা দেবে কি না সেটা কমিটি আলোচনা করবে। হকার্স কর্নার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, সিটু অফিসটি ভেঙে গিয়েছিল। আমরা তা তৈরি করে দেব। প্রশ্ন উঠেছে, বিনা স্বার্থে ব্যবসায়ী সমিতি সিটু-কে পার্টি অফিস বানিয়ে দিচ্ছে? কীসের স্বার্থে কোনও টাকা না নিয়ে তাঁরা সিটুর অফিস বানিয়ে দিচ্ছেন? বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন সম্পাদক? নাকি নিজের ইচ্ছানুসারে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
দীর্ঘদিন কমরেডরা নিজেদের হাতে তৈরি সিটু অফিস আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর সেই দিকে নজর ছিল বলে খবর। তাঁরাই সিটু-কে এই প্রস্তাব দিলে নেতারা এতে রাজি হয়ে যান। বামফ্রন্টের দার্জিলিং জেলা আহ্বায়ক জীবেশ সরকারের বক্তব্য, আরও ভালোভাবে যাতে অফিসটি ব্যবহার করা যায় সেই জন্যই এটা করা হচ্ছে। মার্কেট কমিটির সঙ্গে কথা বলেই এই কাজ হচ্ছে। সিটু, ইউসিআরসি অফিস, হলঘর করা হবে। ওঁরা সেটা তৈরি করে দেবেন। কোনও টাকা কি দেওয়া হবে? জীবেশবাবু বলেন, আমি এটা জানি না। সিটু নেতারা এসব বলতে পারবেন।
যদিও হকার্স কর্নার এলাকায় কীভাবে লোহার খাঁচা বানিয়ে সেখানে দোতলা করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যবসাযীদের একাংশ মনে করছেন পুরোটাই বেআইনি। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এইভাবে দোকানঘর বানানো যায় না। পুরনিগম এক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই এখন দেখার।