ময়নাগুড়ি : লকডাউনে বিভিন্ন স্কুলে অনলাইনে পঠনপাঠন শুরু হলেও ময়নাগুড়ির বার্নিশ এলাকার বাসিন্দা রঞ্জন রায়ের সেই উপায় নেই। কারণ অষ্টম শ্রেণির এই পড়ুয়ার বাড়িতে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট তো দূরের কথা, কোনও অ্যানড্রয়েড মোবাইলও নেই। তার উপর লকডাউনে দিনমজুর বাবার কোনও কাজ নেই, রোজগারও বন্ধ। সংসারে সাহায্য করতে তাই রঞ্জন এখন ময়নাগুড়ি বাজারে সবজি বিক্রি করছে। যদিও এ প্রসঙ্গে ময়নাগুড়ির অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বিবেকানন্দ অধিকারী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের একটু সমস্যা হচ্ছে। কষ্ট করে এই সময়টাকে মানিয়ে নিতে হবে। তাঁর নিদান, বিভিন্ন নিউজ চ্যানেলে যে ক্লাসগুলি হচ্ছে সেগুলি দেখতে হবে। নিজের বাড়িতে না টিভি থাকলে তাঁর পরামর্শ, কাকা-জ্যাঠার বাড়িতে টিভি থাকলে সুনির্দিষ্ট সময়ে দেখতে হবে। এছাড়াও অসুবিধা হলে স্কুলের শিক্ষকদের ফোন করতে হবে। শিক্ষকরা সবরকমের সহযোগিতা করছেন।
রঞ্জন বার্নিশ হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা মহেন্দ্র রায়, মা পঞ্চমী রায়, দাদা সমর ও বোন প্রতিমাকে নিয়ে তার পরিবার। লকডাউনে কাজ না থাকায় সংসার চালানো নিয়ে মহেন্দ্রবাবু সমস্যায় পড়েছেন। সমর আগামী বছর উচ্চমাধ্যমিক দেবে, প্রতিমা সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। এমন অবস্থায় রঞ্জন সংসার চালাতে বাবা-মাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো সে গ্রামীণ এলাকা থেকে সবজি কিনে সাইকেলে করে ময়নাগুড়ি বাজারে নিয়ে এসেছে। সেখান বসে সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করছে সে। রঞ্জন বলে, লকডাউনের ফলে আমাদের সংসার অচল হয়ে পড়ে। পরে আমি একপ্রকার বাধ্য হয়ে এই কাজ শুরু করেছি। ভাবছি পরবর্তীতে বাবাকেও সঙ্গে নেব। রবিবার সারাদিন বাজারে এই কাজ করে সামান্য কিছু উপার্জন হয়েছে। অন্যদিকে মহেন্দ্র রায় বলেন, ছেলের মাথা থেকেই এই বুদ্ধি বেরিয়েছে। ভাবছি ছেলের সঙ্গে আমিও যাব। লকডাউনের বাজারে এখন আর কোনও কাজ মিলবে না। এভাবেই যতদূর এগোতে পারি।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জলপাইগুড়ি জেলা সহ সভাপতি গোবিন্দ পাল বলেন, অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে একথা ঠিক। কিন্তু সকলকে এর আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব নয়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (উচ্চমাধ্যমিক) বালিকা গোলে বলেন, এভাবে ক্লাসের অসুবিধা তো আছেই। সকলের কাছে অ্যানড্রয়েড ফোন নেই। সেই সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি।