কলকাতা : সামনে হুগো বৌমৌস, তিরি, জনি কাউকোর মতো আইএসএল মাত করা বিদেশিদের নিয়ে সাজানো এটিকে মোহনবাগান।
আর তার বিরুদ্ধে মাঠে লড়াই করছে বাংলার এগারোজন দামাল ছেলে। ম্যাচের শেষে ১-০ গোলে ম্যাচ জিতে যখন মাঠ ছাড়ছে সন্তোষ ট্রফিতে রানার্স বাংলা দল, তখন তৃপ্তির ঝলক অধিনায়ক মনতোষ চাকলাদারের চোখেমুখে। সেই খুশি আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেল সুখবর কানে যেতেই।
সন্তোষে দুরন্ত পারফরমেন্স করা বাংলার মনোতোষ ও দিলীপ ওঁরাওকে চাকরি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ৯ মে তাঁদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করছেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেসময় অবশ্য যুবভারতী স্টেডিয়ামের প্র্যাক্টিস গ্রাউন্ডে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে ব্যস্ত মনোতোষ, দিলীপ সহ গোটা বাংলা দল।
ম্যাচের পর সুখবর পাওয়ার পর প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি ফুটবল মাঠে বহুযুদ্ধের পোড়খাওয়া সৈনিক মনোতোষের। অবিশ্বাসের ঢঙেই বললেন, এখনও কিছু পাকা হয়নি। শুনেছি চাকরি পেতে পারি। তবে চাকরির খবর নিশ্চিত হয়েছে জানার পর খুশির রোশনাই মনোতোষের শরীরীভাষায়। বলে গেলেন, এই প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও বাবা প্রতিদিন কাজে গিয়েছেন। এখনও প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন। চাকরি তাই পাওয়া খুব দরকার ছিল। আর বাবাকে কষ্ট করতে হবে না। এবার গিয়ে বলতে পারব, বাবা তুমি বিশ্রাম নাও। আমি সংসারের দায়িত্ব নিচ্ছি। এটা ভেবেই খুব ভালো লাগছে।
দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে ফুটবলই হাতিয়ার চূচূড়ার বাসিন্দা মনোতোষের। ইউনাইটেড স্পোর্টস, ভবানীপুর, পিয়ারলেস, ইস্টবেঙ্গলে খেলা মনোতোষ থাকেন টালির চালের বাড়িতে। দিনকয়েক আগে কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই চাল। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রী। চাকরি পাওয়ার দিনেও অবশ্য ফুটবলকে আকঁড়েই বাঁচতে চান মনোতোষ। বলেন, আইএসএল খেলব, এটা আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সেটা হাতছাড়া করতে চাই না। বেশ কয়েটি ক্লাবের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। ফুটবল খেলেই সকলের প্রত্যাশাপূরণ করতে চাই। পাশে দাঁড়ানো দিলীপের গলাতেও একই সুর।
দমদমের নাগেরবাজার লাগোয়া কাজিপাড়ার বাসিন্দা দিলীপের বাবা পুরকর্মী। মা গৃহস্থবাড়ির সহায়িকার কাজ করেন। বাড়িতে নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। রাজ্য সরকারের দেওয়া চাকরি যে দারিদ্রের লড়াইয়ে বড় সহায়ক হল, মানছেন দিলীপ। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে সন্তোষ ফাইনালে বাংলার গোলদাতা বলেন, বাবা-মা দুজনেই খুব পরিশ্রম করেন। চাকরি পাওয়ায় সুবিধা হল। এবার তাদের পাশে দাঁড়াতে পারব। সঙ্গে যোগ করেছেন, বাংলার হয়ে ভালো খেলার জন্য এই চাকরি পেলাম। আমার মতো দলে অনেকেই আছে যাদের চাকরি দরকার। আমাদের মতো তাদের পাশেও যদি রাজ্য সরকার দাঁড়ায় তাহলে খুব ভালো হয়।
বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে অরূপ বিশ্বাস বলেন, দিলীপ ওঁরাও ও মনোতোষ চাকলাদার এই দুই ফুটবলারকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। দুজনেই অত্যন্ত গরিব পরিবার থেকে উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যম মারফত মুখ্যমন্ত্রী ওদের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা জানতে পেরে নিজের কোটা থেকে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নবান্নের তরফে দুই ফুটবলারের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ও বাংলার কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজে রাজনীতির রং চাইছেন না মহারাজ