বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে লালার নমুনা দিতে এসে বৃহস্পতিবার ফের শ্রমিকদের মধ্যে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়। ঘটনায় জখম হলেন দিল্লি ফেরত এক শ্রমিক। তাকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তার জামা ছিড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই শ্রমিককে বাঁচাতে গেলে বেধড়ক মারধর করা হয় তার স্ত্রী ও মা-বাবাকে। অভিযোগ, গোলমাল আটকাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। এই নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মেডিকেল কলেজের আউটডোর ও ফিভার ক্লিনিক ওয়ার্ডে। পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি হাতে ছুটে আসতে হয় হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের। তারাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিন এই ঘটনায় অশান্ত হয়ে ওঠে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাস। রায়গঞ্জ ব্লকের মারাইকুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের অভোরের পরিযায়ী শ্রমিক ও তার পরিবার দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে কর্মরত ছিল। গতকাল রাতে রায়গঞ্জে পৌঁছে সোজা মেডিকেল কলেজে হাজির হয় করোনা পরীক্ষার জন্য। সেই মোতাবেক পরিবারের লোকেরা আউটডোরের টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়ায়। আচমকাই মহারাষ্ট্র থেকে আসা একদল পরিযায়ী শ্রমিক তাদের ধাক্কা দিয়ে টিকিট কাটার লাইনের সামনের সারিতে চলে যায়। এতেই যাবতীয় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। প্রতিবাদ করেন অভোরের বাসিন্দা সাজিমুল হক। এরপরে মহারাষ্ট্র থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা বেধড়ক মারধর শুরু করে ওই যুবককে। স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হয় স্ত্রী ও পরিবারদের। এরপর সেখান থেকে পরিযায়ী শ্রমিকরা অটো করে পালিয়ে যায়।

এদিকে আক্রান্ত যুবকের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা চলে। কারা তাকে মারধর করেছেন সেই বিবরণ জানানো হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের। আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকের বক্তব্য, ‘আমরা লাইনেই ছিলাম। একদল যুবক আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে সরিয়ে সামনে চলে যায়। আমি প্রতিবাদ করলেই বেধড়ক মারধর করে ওই যুবকেরা। পুলিশকে বারংবার ফোন করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’ রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, ‘গ্রামের এক যুবক ও তার পরিবারকে মারধর করেছে একদল পরিযায়ী শ্রমিক। এই ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব।’
রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজের সহকারী সুপার তথা নোডাল অফিসার বিপ্লব হালদার বলেন, ‘হসপাতালে একটি ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তারক্ষীরা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। পুলিশকেও জানানো হচ্ছে।’ যদিও রায়গঞ্জ থানার পুলিশ আধিকারিক ও জেলা পুলিশের কর্তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পরিযায়ী শ্রমিকদের বক্তব্য, ‘পুলিশকে বারংবার জানালেও তারা আসছেন না। এখানে কোনও সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেইনটেন করা হচ্ছেনা। যে যেমন পারছে আগে গিয়ে লালার নমুনা দিয়ে চলে আসছে। আর আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থেকেও পরীক্ষা করাতে পারলাম না। লালার নমুনাও দিতে পারলাম না। দিনভর না খেয়েই হাসপাতালে পড়ে রয়েছি।’