শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ নিয়ে ক্রমেই প্রশাসনিক জটিলতা বাড়ছে। ২২ ফেব্রুয়ারি মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যের। নতুন উপাচার্য নিয়োগ করতে হলে নিয়মানুসারে সার্চ কমিটি গঠন করা জরুরি। শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সেই কমিটি গঠন হয়নি। আবার বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির নির্দেশ এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে এখন জোর জল্পনা চলছে ক্যাম্পাসে।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতায় ২০১৮ সালে ১১ দিন উপাচার্যহীন ছিল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। সে বছর ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য সোমনাথ ঘোষের চার বছরের কার্যকাল শেষ হয়। আর ২২ ফেব্রুয়ারি নতুন উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন সুবীরেশ ভট্টাচার্য। সেই সময় সার্চ কমিটির পদ্ধতিগত কাজ শেষ হয়নি আবার উপাচার্যের মেয়াদও বৃদ্ধি হয়নি। যার ফলেই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এবারেও কার্যত একইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যে উপাচার্যের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন রাজ্যপাল। সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগেই রাজভবন থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। ফলে উপাচার্য নিয়ে ফের রাজ্যপাল-রাজ্য সরকার সংঘাত তৈরি হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশ। বিষয়টি নিয়ে অবশ্য এখনই কোনও মন্তব্য করতে নারাজ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ করা হবে।
সুবীরেশবাবু দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলাচ্ছেন। ফলে তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধি বা তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রণব ঘোষ বলেন, এখনও পর্যন্ত উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেনি। সার্চ কমিটি গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রতিনিধি ঠিক করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টের সভা থেকেই সেই প্রতিনিধি ঠিক করা হয়। সেই সভা এখনও হয়নি। যদিও শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সার্চ কমিটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি চেয়ে বিকাশ ভবন থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এক মাসেরও বেশি সময় মূল ক্যাম্পাসে ছিলেন না উপাচার্য। কয়েকদিন আগেই তিনি ফিরেছেন। আধিকারিক, শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, মেয়াদ বৃদ্ধি হতে পারে এমন সংকেত পেয়ে শিলিগুড়িতে ফিরেছেন তিনি। আরেকটি অংশের মত ঠিক উলটো।
এই পরিস্থিতিতে আইনত কোন কোন পদক্ষেপ করতে পারে শিক্ষা দপ্তর? দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সার্চ কমিটি তৈরি করে উপাচার্য নিয়োগ করতে হয়। রাজ্যপাল, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এই তিন সদস্য নিয়ে সার্চ কমিটি গঠিত হয়। রাজ্যপালের প্রতিনিধি সেই কমিটির চেয়ারম্যান হন। সার্চ কমিটি গঠন করা হলে সেখানে উপাচার্যের নামের মনোনয়ন পাঠানোর জন্য ন্যূনতম এক মাস সময় দিতে হয়। বর্তমান উপাচার্যের আর যে কয়েকদিন মেয়াদ আছে তার মধ্যে পদ্ধতি মেনে নতুন নিয়োগ সম্ভব নয়।
রাজ্যপালের সঙ্গে বর্তমানে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক রাজ্য সরকারের। আবার সার্চ কমিটি গঠন করা হলে উপাচার্য নিয়োগের জন্য রাজ্যপালের অনুমোদনও দরকার। ফলে রাজ্যপালের প্রতিনিধিকে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনে কতটা আগ্রহ দেখাবে রাজ্য সরকার তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেই দিক থেকে উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সংশোধিত আইন অনুসারে, সেক্ষেত্রে রাজ্যপালকে এড়িয়ে শিক্ষা দপ্তর মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারে। তবে কতদিনের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি করা হতে পারে সেটা শিক্ষা দপ্তরই ঠিক করবে।
শিক্ষা দপ্তরের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, মেয়াদ বৃদ্ধি না করে অন্য উপাচার্যকেও বাড়তি দায়িত্ব দিতে পারে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তেমনটাই দেখা গিয়েছে। অনিল ভুঁইমালির মেয়াদ না বাড়িয়ে সেখানে দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সঞ্চারী রায়কে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ ও দার্জিলিং হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সেভাবে অন্য উপাচার্যদের বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। শেষ পর্যন্ত কোন পথে হাঁটেন শিক্ষামন্ত্রী সেটাই দেখার।