সপ্তর্ষি সরকার, ধূপগুড়ি : সম্প্রতি দুই-তিন মাসের মধ্যে রাজ্যে ১৬,৫০০ জন টেট উত্তীর্ণ শিক্ষককে নিয়োগের পাশাপাশি প্রাথমিকে আবেদনকারীদের জন্য অফলাইন পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে টেট উত্তীর্ণ বলা হলেও সেটা পাঁচ বছর ধরে ঝুলে থাকা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির আপার প্রাইমারির নিয়োগই কি না সেটা নিয়ে স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। ফলে এই ঘোষণায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা মহলের অনুমান, ২০১৫ সালে হওয়া আপার প্রাইমারি টেটের নিয়োগের কথাই বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে ২,০৩১টি মামলা বিচারাধীন হওয়ায় কী করে রায়ে আগেই দুই-তিন মাসের মধ্যে নিয়োগের ঘোষণা করা হল, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের ফেসবুক ও টুইটার বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে ঘোষণার পরেই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করে জানান, ১৬,৫০০ জন টেট আবেদনকারী ফেব্রুয়ারি ২০২১-এর মধ্যে চাকরিতে য়োগদান করবেন। এখানে টেটে উত্তীর্ণ না বলে টেট আবেদনকারী উল্লেখ্য করায় ২০১৫ সালে পরীক্ষা দিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত আপার প্রাইমারির মেধাতালিকায় নাম থাকা চাকরিপ্রার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে যান। তবে এই ঘোষণায় আশার আলো দেখেন ২০১৭ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য টেট আবেদনকারীরা। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র তাঁর ফেসবুক পোস্টে প্রশিক্ষিত টেট উত্তীর্ণদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ দেওয়ার জন্যে মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এই পোস্ট দেখে প্রাথমিকে আবেদনকারীরা উত্সাহিত হলেও ঝুলে থাকা আপার প্রাইমারি নিয়োগপ্রার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আপার প্রাইমারি নিয়োগের জন্য অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীদের টেনশন আরও বাড়িয়ে দেয় রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের টুইট। মন্ত্রীর টুইটে আপারের উল্লেখ না করে প্রাইমারি স্কুলে ১৬,৫০০ জনের নিয়োগের কথা বলা হয়। রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র সুদীপ রাহা তাঁর ফেসবুক পোস্টে জানান, ১৬,৫০০ জন প্রাইমারি টেট উত্তীর্ণ চাকরি পেতে চলেছেন। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম টুইটে জানান, টেট উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকেই নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী টেট নেওয়া হবে অফলাইনে। মমতা ব্যানার্জী সাপোর্টার নামে একটি তৃণমূল পরিচালিত ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়, আপার প্রাইমারিতেই নিয়োগ হবে ১৬,৫০০ শিক্ষক। চাকরিপ্রার্থীরা তবুও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে সরকারি ঘোষণা চাইছেন।
২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রাথমিকে নিয়োগের জন্য ফর্ম ফিলআপ করা শান্তনু সরকার বলেন, ফর্ম ফিলআপ করে তিন বছর ধরে অপেক্ষায় আছি টেটের। এর মধ্যেই শুনলাম প্রাইমারিতেই টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ হবে। আমরাই তো শেষ আবেদনকারী এবং আমাদের পরীক্ষা হয়নি এখনও। তাহলে এরা ঠিক কারা বুঝতে পারছি না। আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের উত্তরবঙ্গ আহ্বায়ক সুশান্ত ঘোষ বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে এখনও আমাদের মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে আদালতের রায়। তার উপরেই নির্ভর করছে পরের বিষয়টি। তিনি জানান, ২০১৯ সালে সর্বশেষ সরকারি ঘোষণা অনুসারে আপার প্রাইমারিতে ১৪,৩৩৯টি ভ্যাকান্সি রয়েছে। এর সঙ্গে আরও দশ শতাংশ আসন রয়েছে প্যারাটিচারদের জন্যে সংরক্ষিত। দুটো মেলালেও ১৬,৫০০ সংখ্যাটা আসছে না। তাই আরও ধন্দ বেড়ে যাচ্ছে।