কোচবিহার : করোনার জন্য লকডাউনের জের এবার পড়ল গরিব মানুষের ঘর নির্মাণ প্রকল্পের কাজে। জেলায় জেলায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (বাংলার আবাস যোজনা) ঘর তৈরির কাজ আটকে গিয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকা মিলে ১৫ হাজারের উপর ঘর তৈরি বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উপভোক্তারা। নির্দিষ্ট সময়ে ঘর তৈরিই এখন জেলাগুলির কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ে ঘর তৈরি না হলে বর্ষায় কী হবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক কর্তা ও উপভোক্তারা চিন্তিত।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, করোনার জন্য সমস্ত চালু প্রকল্পে সমস্যা তৈরি হয়েছে। দপ্তর বন্ধ। কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। লকডাউন উঠে গেলে দ্রুত যাতে ঘর তৈরির কাজ হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা বা বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পে ২০১৯-২০২০ আর্থিক বর্ষে গরিব মানুষের ঘর তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ মিলে ১৫ হাজার ৬০৭টি ঘর তৈরি বন্ধ রয়েছে। লকডাউনে শ্রমিকরা কাজে আসছেন না। কোনও ঘর অর্ধেক হয়ে আটকে গিয়েছে, আবার কোনওটির ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ হয়েছে। কিন্তু ২৩ মার্চ লকডাউনের পর থেকে আর কাজ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে উপভোক্তারা সমস্যায় পড়েছেন। নতুন ঘর হচ্ছে দেখে অনেকে পুরোনো ঘর ভেঙে দিয়েছেন। তাঁরা কোনওভাবে বাস করছেন। নতুন ঘর তৈরি হলে তাতে দ্রুত গিয়ে উঠবেন এই আশায় তাঁরা বসেছিলেন। এর সঙ্গে সামনেই বর্ষা আসছে। তখন যেমন ঠিকভাবে কাজ হবে না, তেমনই উপভোক্তারা মাথাগোঁজার ঠাঁই কীভাবে পাবেন, তা নিয়ে সকলেই চিন্তিত। বেশ কয়েকজন উপভোক্তা তাঁদের সমস্যার কথা ব্লক ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
কোচবিহার জেলা পরিষদের এইও রামকৃষ্ণ মালি বলেন, আমাদের ৩ হাজার ৮০৫টি ঘর তৈরির কাজ চলছে। এখন সমস্যা থাকায় সাময়িক কাজ বন্ধ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত কাজ হবে। আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি শিলা দাসসরকার বলেন, আমাদের ৭ হাজার ৩৪২টি ঘর তৈরির কাজ চলছে। এগুলির কোনওটা অর্ধেক, আবার কোনও ঘরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। এখন শ্রমিকরা আসছেন না। তাই কাজ বন্ধ। আর এই পরিস্থিতিতে যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁদের তো আর কাজে আসতে বলা যায় না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এখন তাকিয়ে রয়েছি। জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা বর্মন বলেন, আমাদের ৪ হাজার ৫৮টি ঘর তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখন কাজ বন্ধ আছে। লকডাউন উঠলে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হবে। শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি তাপস সরকার বলেন, ৪০২টি ঘরের কাজ বন্ধ রয়েছে। কাজ বন্ধ থাকায় খুবই সমস্যা হয়েছে। বর্ষা নামার আগে কাজ শেষ করতে হবে। না হলে সকল উপভোক্তা সমস্যায় পড়বেন। আমাদের এই সমস্যা নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েস্তরে আলোচনা করা হবে।