বেলাকোবাঃ ওয়ার্ল্ড চিল্ড্রেন ক্যাডেট এন্ড জুনিয়ার কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে ঘরে ফিরল রাজগঞ্জ ব্লকের কিশোরী প্রিয়াংকা রায়। ইতালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কিক বক্সিং এর আসরে ৩৭ কেজি বিভাগে ব্রোঞ্জ পদক জয় করে সে। কিশোরীর সাফল্যে খুশি গোটা গ্রাম। এদিন তাঁকে দেখতে রাজগঞ্জ ব্লকের চান্দার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রচুর মানুষ।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত ইতালিতে বসেছিল ওয়ার্ল্ড চিল্ড্রেন ক্যাডেট এন্ড জুনিয়ার কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। ৩৭ কেজি বিভাগে ভারতের হয়ে অংশগ্রহণ করেছিল রাজগঞ্জ(Rajganj) ব্লকের পানিকৌরি গ্রাম পঞ্চায়েতের চান্দারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ১৩ বছরের কিশোরী প্রিয়াংকা রায়। প্রিয়াংকার বাবা নৌজন রায় পেশায় রাজমিস্ত্রি। চান্দার বাড়ি গুলোকান্ত হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সে।
জানা গেছে, ৩ অক্টোবর ইতালিতে প্রিয়াংকা প্রথম লড়াইয়ে নামে হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে। ৪ অক্টোবর দ্বিতীয় লড়াই ছিল আমেরিকার বিরুদ্ধে। এই দুই দেশের প্রতিপক্ষকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রিয়াংকা মুখোমুখি হন পোলান্ডের। সেখানেও সাফল্য ধরে রেখে পৌঁছে যায় সেমি ফাইনালে। শেষ রক্ষা হয়নি। সেমিফাইনালে হাঙ্গেরির কাছে হেরে ব্রোঞ্জ পদক নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় প্রিয়াংকাকে। ৯ অক্টোবর রাতে ইতালি থেকে দলের সাথে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিল্লি হয়ে মঙ্গলবার সকালে বাগডোগরা বিমান বন্দরে নামে ব্রোঞ্জ জয়ী এই কিশোরী। এদিন সকালে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন বাবা নৌজন রায়, মা মাধবী রায় সহ পরিবার ও স্কুলের একাধিক শিক্ষক। প্রিয়াংকা বাড়ি ফিরলে তাঁকে সংবর্ধনা ও শুভেচ্ছা জানাতে হাজির ছিলেন প্রচুর মানুষ ও বেশ কয়েকটি সংগঠন।
প্রিয়াংকার বাবা নৌজন রায় বলেন, ‘ধার দেনা করে মেয়েকে ইতালিতে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে দেশের হয়ে পদক জয় করে মুখ উজ্জ্বল করেছে। এর জন্য খুব খুশি। আর্থিক অনটনের কারণে কতদিন তার মেয়ের জন্য করে যেতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ইতালিতে পাঠাবার ক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য না পাওয়ায় তারা হতাশ’।
প্রিয়াঙ্কার কোচ প্রসন্ন রায় বলেন প্রিয়াংকা দেশের তথা পশ্চিমবঙ্গ তথা জলপাইগুড়ি জেলা রাজগঞ্জ ব্লকের গর্ব। তার ফলাফলে তিনি অত্যন্ত খুশি। সেই সঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন স্বপ্না বর্মন, ঋদ্ধিমান সাহা দেশের কৃতী খেলোয়াররা দেশের গর্ব হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য তথা প্রশাসনিক উদাসীনতায় ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। সরকারি সাহায্য না পেলে প্রিয়াংকার মতন খেলোয়াড়দের এগিয়ে যাওয়া মুশকিল। রাজ্য সরকারের উচিৎ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার।
প্রিয়াংকার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবার ২০২১ সালে স্টেট লেভেলে মাত্র ১২ বছর বয়সে সোনা জিতেছিল প্রিয়াংকা। ২০২২ সালে পুনেতে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল গেমসেও সোনা পেয়েছে সে। পরবর্তীতে চেন্নাইতে প্রথম সিলেকশন ক্যাম্পে উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার দ্বিতীয় সিলেকশন ক্যাম্পে সোনা জয় করে ইতালিতে বিশ্ব জুনিয়ার কিক বক্সিং-এ অংশ নেওয়ার ছাড়পত্র আদায় করে নেয় রাজগঞ্জের কিশোরী প্রিয়াংকা। দেশের মাটিতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একাধিক সোনার পদক জয় করলেও বিদেশের মাটিতে এবারই তার প্রথম পদক জয়।