মালদা : খাঁখাঁ করছে প্ল্যাটফর্ম। শুনসান স্টেশন। লকডাউনের পর থেকে এটাই এখন মালদা টাউন স্টেশনের চেনা ছবি। তবে এই ছবিটাকে কিছুতেই নিজের মনের মধ্যে খাপ খাওয়াতে পারছেন না বছর ষাটের পরিমল সরকার। ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনওরকমে দুমুঠো খাবার জোগাড় করেন পরিমলবাবু।
আজ সব কিছু কেমন পালটে গিয়েছে। যাত্রী নেই, ট্রেন নেই। কোথায ভিক্ষা করব বাবু? বৃদ্ধের প্রশ্নটা বিঁধছিল কানে। পেটের জ্বালায শুয়ে বসে আর দিন কাটে না। একসময স্টেশন চত্বর থেকে বেরিযে মালদা শহরের পথেঘাটে ঘুরতে শুরু করেন, যদি কোথাও কারও কাছ থেকে খাবার মেলে। যদি দুচার টাকা পাওয়া যায়! কিন্তু লকডাউনের জেরে ঘরবন্দি শহরের আমআদমি। পরিমলবাবুর হাতে ভিক্ষা দেওযার মতো লোকই যে নেই পথে। অনাহারে শহরের এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করতে করতে ক্লান্ত শরীর আর টানতে পারছিলেন না। একসময সুভাষপল্লি এলাকায় অসুস্থ হয়ে রাস্তায পড়ে যান। এলাকাবাসী প্রাথমিক চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ করে তোলেন পরিমলবাবুকে। খবর যায় উপপুরপ্রধান দুলাল সরকারের কাছে। খবর দেওযা হয ইংরেজবাজার থানাতেও। পুলিশকর্মীদের নিযে ঘটনাস্থলে যান দুলাল সরকার। অসুস্থ পরিমলবাবুর জন্য থাকা-খাওযার ব্যবস্থা করে দেন তাঁরাই। দিন কয়েক পর কিছুটা সুস্থ হযে ওঠেন পরিমলবাবু। নাম পরিচয় জেনে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হন উপপুরপ্রধান। বাড়ি পৌঁছে দিতে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক করে দেন ওই বৃদ্ধের জন্য।
আক্ষেপের সুরে পরিমলবাবু বলেন, বাড়িতে দু-দুটো ছেলে আছে। কিন্তু আমাকে খেতে দেয় না। একা একটা ঘরে থাকি। পেটের জ্বালায় ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছি। মালদা স্টেশনে এসে ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষা করে খাবার জোগাড় করতাম। তাই আমি গাজোলে যেতে চাই না। মালদা শহরেই থাকতে চাই। মালদা রেলওয়ে হাসপাতালের সামনে একটি দোকানের বারান্দা এখন পরিমলবাবুর ঠিকানা। দুলাল সরকারের উদ্যোগে প্রতিদিন এলাকার ভরঘুরে ও আটকে থাকা মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দু-বেলা এলাকার সব ভবঘুরেকে খাওয়ানো হচ্ছে। সেই খাবার খেয়ে এখন সুস্থ রয়েছেন পরিমলবাবু।
উপপুরপ্রধান বলেন, আমি ওঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তিনি বাড়ি যেতে রাজি নন। তাই এখানেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেছি। আমরা প্রতিদিন এলাকার ভবঘুরেদের খাবার দিচ্ছি। সেই খাবার তাঁকেও দেওয়া হচ্ছে। এখানে তাঁর কোনও অসুবিধা হবে না।
ছবি- পরিমল সরকার
তথ্য ও ছবি- হরষিত সিংহ