নয়াদিল্লি: করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৮০০ ছাড়াল। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাস মিলেছে ২৬৪৯৬ জনের দেহে। এর মধ্যে চিকিত্সায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫৮০৪ জন। মৃত ৮২৪ জন। অর্থাত্ দেশে সক্রিয় করোনা রোগী ১৯৮৬৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৯৯০ জনের দেহে নতুন করে করোনা ভাইরাস মিলেছে। একদিনে এত সংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আগে ঘটেনি। ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয স্বাস্থ্যমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের বক্তব্য, লকডাউনে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলায় করোনার সংক্রমণ এখনও স্টেজ থ্রি বা গোষ্ঠী সংক্রমণের পর্যায়ে যায়নি।
আরও পড়ুন: কিম জং উনের মৃত্যু নিয়ে জল্পনা
মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি, রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক। মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬২৮। ওই রাজ্যে ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩২৩ জনের। মহারাষ্ট্রের মতো গুজরাটেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। গুজরাটে মোট আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০৭১ ও ১৩৩। দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর (২৬২৫)। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫৪ জনের। মোট আক্রান্ত ও মৃতের পরিসংখ্যানে রাজস্থান (২,০৮৩ ও ৩৩) ও মধ্যপ্রদেশ (২০৯৬ ও ৯৯) ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে।
এছাড়া তামিলনাড়ুতে মৃত ২৩ জন৷ পঞ্জাবে মৃত ১৭। এছাড়া জম্মু-কাশ্মীরে ৬, কেরলে ৪ এবং ঝাড়খন্ড, হরিয়ানায় ৩টি করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৷ বিহারে করোনায় মৃত ২। মেঘালয়, হিমাচল, ওড়িশা, অসমে একটি করে মৃত্যুু হয়েছে৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত বাংলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬১১। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। চিকিত্সায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৫ জন। অর্থাত্, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসাবে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগী ৪৮৮ জন। যদিও রাজ্য সরকারের গতকাল বিকেলের দেওয়া হিসেব বলছে, এ রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ৪২৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। চিকিত্সায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৫ জন।
আরও পড়ুন: ‘দো গজ কি দুরি’, করোনা ঠেকাতে নয়া স্লোগান নমোর
তবে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও তা ভীতিকর নয় বলে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের নেতত্বাধীন ক্যাবিনেট বৈঠকে আন্তঃমন্ত্রীগোষ্ঠীকে জানিয়েছে, বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে মৃতের হার ৩.১ শতাংশ। কিন্তু সেরে ওঠার হার এর চেয়ে অনেক বেশি, ২০ শতাংশ। সুস্থ হওয়ার নিরিখে ভারত অন্য অনেক রাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে বলে দাবি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের। শনিবার দেশের করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রী গোষ্ঠী বৈঠকে বসেছিল। বিভিন্ন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
আরও পড়ুন: সোমবার ফের মুখ্যমন্ত্রীদের মুখোমুখি মোদি
জানা গিয়েছে, দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে ৯.১ দিনে। শুক্রবার করোনা আক্রান্তের বৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৪৮ শতাংশ হারে। শনিবার বৃদ্ধির হার কমে হয় ৫.৮ শতাংশ। দেশে মোট যত জন আক্রান্ত হয়েছেন তার ভিত্তিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার নির্ণয় করা হয়। দুদিন আগে সরকার জানিয়েছিল, কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যার বৃদ্ধির হার বাড়ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দাবি, লকডাউনের ফলে আক্রান্তের বৃদ্ধির হার রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৬৪৯৬। কিন্তু এই সংখ্যাটা প্রায় ২ লক্ষ হত, যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লকডাউন সময় মতো ঘোষণা না করতেন।

এদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট বন্ধের নির্দেশ দিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর)। শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওযা পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ শনাক্ত করার জন্য র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা যাবে না।
আইসিএমআর-এর প্রধান রমণ আর গঙ্গাখেড়কার গতকাল বলেন, টেস্ট কিটগুলি আনা হয়েছে চিন থেকে। র্যাপিড টেস্ট আর আরটি-পিসিআর টেস্টের ফলাফলের মধ্যে বিরাট ফারাক থাকায় সন্দেহ হয় কয়েকটি রাজ্যের। সে কারণে র্যাপিড টেস্ট আপাতত বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলিকে। চিন থেকে আসা কিটগুলি আমাদের ৮টি ইন্সটিটিউটে পরীক্ষা করা হবে। সেগুলি ত্রুটিপূর্ণ প্রমাণিত হলে চিনের কোম্পানিকে বলা হবে তা পালটে দিতে। এর আগে বিভিন্ন রাজ্যের কাছ থেকে টেস্ট কিটের কার্যকারিতা সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়ার পর আইসিএমআর সবাইকে দুদিনের জন্য কিট ব্যবহার বন্ধ রাখতে বলেছিল।
আরও পড়ুন: কী বিপদ, জলেও ঘাপটি মেরে করোনা
চিনের যে দুটি সংস্থা, ওন্ডফো বায়োটেক এবং লিভজন ডায়াগনস্টিক ওই র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটগুলি বানিয়েছিল, তাদের দাবি, কিটে কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে নিয়মানুযায়ী এগুলি ব্যবহার করতে না পারায়। ভারতীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা কিটগুলি ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেন না বলে সেগুলি থেকে প্রত্যাশিত ফল মিলছে না বলে দাবি সংস্থাদুটির। চিন থেকে এরকম ৫ লক্ষ কিট আনা হয়েছে বলে খবর। এই কিটগুলি বিভিন্ন রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। ওই কিটগুলি থেকে সংক্রমণ ধরা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ও রাজস্থান।