নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বেলেঘাটার এই বাড়িতে এখন চলছে ধুন্ধুমার যুদ্ধ। এই যুদ্ধ সীমান্তের চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর। অনেক কঠিন। কারণ, এই যুদ্ধ এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে। বাড়ির গায়ে লেখা রয়েছে নাইসেড। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস। এখন এই নাম বহুচর্চিত।
এখানেই চলছে করোনা পরীক্ষা। দুজন মেডিকেল মাইক্রো বাযোলজিস্ট, দুজন সায়েটিস্ট, দুজন রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট, দুজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটর, চার জন ল্যাব টেকনেশিয়ান এবং ৬ জন মাল্টি টাস্কিং স্টাফ মিলিয়ে ১৮ জন সৈনিক। কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থায় এখন দিবারাত্র অনেক ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা পরীক্ষা করে চলেছেন রোগীদের লালারস।
রিসার্চ সায়েটিস্ট অনন্যা চট্টোপাধ্যায় মাতত্বকালীন ছুটি নেওয়া তো দূরের কথা, একদিনও অফ ডে নিচ্ছেন না। ৯ মাসের শিশুকে বাড়িতে রেখে টানা কাজ করে চলেছেন। শিশুর দেখভালের জন্য রাখা পরিচারিকাকেও ঢুকতে দিতে আপত্তি জানিয়েছেন ভাড়াবাড়ির মালিক। তবু কর্তব্যে ছেদ নেই তাঁর। মধুমন্তী বিশ্বাসও রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট। মাস তিনেক আগে বিয়ে হয়েছে। তিনিও নতুন সংসার ফেলে মানুষের সেবায় ব্রতী। চিকিত্সক তথা মাইক্রো বায়োলজিস্ট অগ্নীভ মজুমদার বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাড়ির সকলের থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছি। কারণ, করোনা পরীক্ষায় ঝুঁকি কম নয়।
আর এক চিকিত্সক তথা মাইক্রো বায়োলজিস্ট হাসিনা বানু জানান, নাইসেডে কাজ করায় এক সহকর্মীকেও বাড়ির মালিক ঘর থেকে বের করে দিচ্ছিলেন। নাইসেড কর্তৃপক্ষ বাড়ির মালিককে বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে সহকর্মীকে আর বাড়ি-ছাড়া হতে হয়নি।
নাইসেডের ডিরেক্টর শান্তা দত্ত বলেন, মানুষের কথা ভেবেই আমাদের সহকর্মীরা পরিবার ভুলে দিনরাত নমুনা পরীক্ষার কাজ করছেন। সোমবার পর্যন্ত তাঁরা ২৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করেছেন। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ৩১৯। এছাড়াও গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা বুঝতে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস প্রক্রিয়ায় ১৩৭টি পরীক্ষা হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করছেন নাইসেডের যোদ্ধারা। অনেক সময় রীতিমতো যুদ্ধকালীন তত্পরতায কাজ চলছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুরোধে রাত ৩টেতেও সন্দেহভাজনের লালারস পরীক্ষায় ক্লান্তি নেই তাঁদের।
তবে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজ করতে গেলে কেন্দ্র-রাজ্য একযোগে কাজ করলেই ভালো হয় বলে মনে করেন নাইসেড প্রধান। তিনি বলেন, আমাদের সবসময়ই দিল্লির সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে হয়। কিন্তু এতে দেরি হয়। রাজ্যের প্রধান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে কথা বলে কাজ করতে অনেক সুবিধে। কিন্তু নিয়মের নিগড়ে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাই না।