বালুরঘাট : মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর একদিনেই বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি একটি চক্ষু পরীক্ষাকেন্দ্রকে শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কোভিড হাসপাতাল করল জেলা প্রশাসন। বালুরঘাট শহরের বাইরে ৫১২ নম্বর জাতীয সড়কের ধারে রঘুনাথপুর এলাকায় ওই হাসপাতালে ২৫টি বেড রয়েছে। প্রযোজনে আরও ১০টি বেড বাড়ানো হতে পারে। মঙ্গলবারেই হাসপাতালের পরিকাঠামো ঘুরে দেখেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। এছাড়াও বালুরঘাটের নতুন তৈরি হওয়া নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রে অন্ততপক্ষে ১০০ জনকে রাখা যেতে পারে। এমনই মনে করছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। বালুরঘাট স্টেডিয়ামের চারটি ঘর নেওয়া হচ্ছে কোয়ারান্টিন সেন্টারের জন্য। জেলায় প্রতিটি ব্লকে দুটি করে চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সিএমওএইচ সুকুমার দে।
সোমবার দুপুর ১২টা থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে মিটিংযে পর ডিআইজি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যাযে নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা ওই ভবনগুলি পরিদর্শন করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। চক্ষু পরীক্ষাকেন্দ্রের এই বেসরকারি হাসপাতালটি শুধুমাত্র করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
জানা গিয়েছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলার বালুরঘাট সদর এবং গঙ্গারামপুর মহকুমায় খোলা আইসোলেশন ওয়ার্ড হয়েছিল। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঁচটি ও গঙ্গারামপুরে ১০টি শয্যার ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া জেলার কুমারগঞ্জ, তপন, হরিরামপুর এবং কুশমণ্ডিতেও একটি করে কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছিল। সেগুলিতে ২৬৪টি বেডের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স হয়। সেখানে করোনা নিয়ে জেলা প্রশাসনের এই পরিকাঠামোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। করোনা নিয়ে দ্রুত উন্নত পরিকাঠামো গড়তে নির্দেশ দেন তিনি। এরপরেই তৎপর হয় জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশ প্রশাসন। বুধবার জেলাশাসক নিখিল নির্মল, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে, ডিআইজি (মালদা রেঞ্জ) প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত সহ অন্য আধিকারিকরা কিছু ভবন পরিদর্শন ও চিহ্নিত করেন। সেইসব জায়গায় কোভিড হাসপাতাল, আইসোলেশন এবং কোয়ারান্টিন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। আগের তুলনায বহুগুণ বাড়ানো হচ্ছে শয্যা বা বেডের সংখ্যাও।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘করোনা পজিটিভ রোগীদের জন্য আইসোলেশন স্ট্যান্ডার্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই হাসপাতালের জন্য বালুরঘাটের প্রয়াস আত্রেয়ী নামে একটি চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্রকে দেখা হয়। সেখানে বেড থেকে শুরু করে চিকিৎকদের রেস্ট রুম, বাথরুম সহ অন্য পরিকাঠামো রয়েছে। সেই কারণে প্রয়াস আত্রেয়ীকে কোভিড হাসপাতালের জন্য বাছাই করা হয়। এখনই সেখানে ২০ বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রযোজনে সেখানে আরও ১৫টি বেড বাড়ানো যাবে। এরপর বালুরঘাটের নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রটি দেখা হয়। সেটিকে আইসোলেশন ব্যবস্থার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। যে রোগীর উপসর্গ বেশি তাকে এখানে রাখা হবে। এখানে ১০০ বেডের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। একদিনের মধ্যে এখানে পরিকাঠামোর পাশাপাশি ডাক্তার এবং নার্সের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি গঙ্গারামপুর মহকুমায় ৪০টি বেডের আইসোলেশন সেন্টার চিহ্নিত হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আরও জানান, ‘জেলায় একটা কোভিড হাসপাতাল হচ্ছে বালুরঘাটে। এছাড়া ১৯টি কোয়ারান্টিন সেন্টার হচ্ছে। জেলার আটটি ব্লকে দুটি করে মোট ১৬টি এবং তিনটি পুরসভা এলাকায় একটি করে কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলা হচ্ছে।
এদিকে উত্তরবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতা তথা বালুরঘাটের বাসিন্দা নীলাঞ্জন রায়। এদিন তিনি করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোট ১৩ দফা দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষিণবঙ্গে করোনা সেন্টার তৈরি হলেও উত্তরবঙ্গে কিন্তু ওই সেন্টারগুলি করা হচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের বিভিন্ন সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলোতে করোনা সেন্টার চালু, করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করার দাবি জানিয়েছেন নীলাঞ্জনবাবু।
ছবি- আইসোলেশন ওয়ার্ড দেখছেন প্রশাসনের কর্তারা।– মাজিদুর সরদার
তথ্য – সুবীর মহন্ত