জামালদহ : মাথার উপরে খাঁখাঁ রোদ। পায়ের নীচে গরম বালি। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। পেটের টানে গরম সহ্য করে যেতে হচ্ছে ওঁদের। লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়েছেন দিন আনি দিন খাওয়া বহু মানুষ। নিজেদের পেশা হারিয়ে নদীকে আঁকড়ে ধরে এখন বেঁচে থাকার লড়াই চালাচ্ছেন কেউ কেউ। লকডাউনকে তোয়াক্কা না করে ভোর হতেই বাড়ি ছেড়ে তাঁদের রোজ ছুটতে হচ্ছে নদীর চরে। বালুচরে দিনভর বেঁচে থাকার রসদ খুঁজতে থাকে ওঁরা। বালির সঙ্গে মিশে থাকা পাথর তুলে বিক্রি করে তবেই মিলছে ভাত।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা দিয়ে বয়ে চলেছে সুটুঙ্গা নদী। ওই নদীর চরে গিয়ে দেখা গেল, রোদ মাথায় নিয়ে পাথর সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন অনেকেই। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রত্যেকেই দিনমজুরি করে এতদিন সংসার চালাতেন। কিন্তু লকডাউনের এখন আর তাঁদের কাজে কেউ ডাকছেন না। অগত্যা নিরুপায় হয়ে তাঁরা পাথর সংগ্রহের কাজ বেছে নিয়েছেন।
গরম বালির মধ্যে পাথর কুড়োতে কুড়োতে ছাট জামালদহ এলাকার বাসিন্দা বীরেন মণ্ডল বলেন, দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে চারজনের সংসার। আগে কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। সেই কাজ করে যা মিলত, তাই দিয়ে সংসার চলে যেত। কিন্তু লকডাউনের জেরে এখন আর কেউই কাজে ডাকছেন না। কাজ না থাকায উপার্জন বন্ধ। তাই পেট চালাতে পাথর তুলছি। একদিন পাথর না তুললে পেটের ভাত জুটবে না। তিনি বলেন, হতদরিদ্র হলেও র্যাশনে বিনামূল্যে জিনিস মিলছে না। তাই একাজ না করলে আর বেঁচে থাকার উপায় থাকবে না। মকরারি জামালদহ এলাকার ময়না বর্মনের বক্তব্য, একদিন কাজ না করলে পেটের ভাত জোটে না। আগে বটলিফ কারখানায কাজ করতাম। এখন কারখানা বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে পাথর খুঁজতে নদীর পাড়ে আসতে হয়েছে। আর মানি অধিকারীর কথায, ইচ্ছে থাকলেও আমাদের পক্ষে ঘরবন্দি থাকা সম্ভব নয়।
সারাদিন পাথর সংগ্রহ করে তা নদীর ধারেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে সেগুলি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। পাথরের কারবারিরা নদীর পাড় থেকেই সেই পাথর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে পাথর বিক্রি করে বীরেনবাবুরা যা পাচ্ছেন, তা পরিশ্রমের তুলনায় অনেক কম বলে অভিযোগ। বিনা অনুমতিতে নদী থেকে পাথর তোলা অবৈধ জানা সত্ত্বেও পেটের তাগিদে তাঁদের একাজ করে যেতে হচ্ছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। সেচ দপ্তরের মেখলিগঞ্জ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক সমীর বর্মনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে চাননি। তবে জামালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গীতা বর্মন জানিয়েছেন, মানুষ নিরুপায় হয়ে বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজছেন।