কল্লোল মজুমদার,মালদা: করোনা আবহে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হলেও ২০২১-র প্রথমেই যে বিধানসভা নির্বাচন অনিবার্য, তা ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে ঘর গোছাতে শুরু করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। রাজ্যের শাসকদল তণমূল, কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি তো বটেই, ঘর গোছানোতে পিছিয়ে নেই বামকংগ্রেসও।
কিছুদিন আগেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বেঁচে থাকার সময় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়। সেই আলোচনা অনুযায়ী জেলায় জেলায় বামকংগ্রেসের জোট নিয়ে কর্মীদের কাছে বার্তা এসে পৌঁছায়। সেই বার্তা অনুযায়ী মালদা জেলাতে ঘর গোছাতে শুরু করে বাম-কংগ্রেস। এরই মধ্যে গত সোমবার দক্ষিণ মালদার কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী দলীয় সভায় মন্তব্য করেন, এই জেলায় সিপিএমের তেমন কিছু নেই। সাংসদের এই মন্তব্য মোবাইল বন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে বাম মহলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া না জানালেও তিনি বলেন, ভিডিওটি রাজ্য নেতত্বের কাছে পাঠিয়ে নালিশ জানানো হয়েছে। তবে সিপিএমের অপর এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, সাংসদের এই মন্তব্য জোট প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বিধানসভা নির্বাচনে মালদা জেলার ১২টি আসনের একটিতেও জয়ী হতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। তবে কেন্দ্রের শাসকদলের ঝুলিতে জোটে একটি মাত্র আসন। তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়ে সবকটিতেই জয়ী হয় বামেরা। কংগ্রেস জয়ী হয় আটটি আসনে। তবে এই আটটি আসনের একটি মালতীপুর বিধানসভাকেন্দ্রে বাম-কংগ্রেস পৃথক পৃথক লড়াই করে। জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী। পাশাপাশি গত লোকসভা নির্বাচনে মালদার দুটি আসনের একটিতে জোট করে লড়াই হয়। অপরটিতে লড়াই হয় পৃথকভাবে। পৃথকভাবে লড়াই করা আসনে হার মানতে হয় বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীকে। উত্তর মালদা আসনে জয়ী হন বিজেপি প্রার্থী। জোট করে লড়াই করা আসন দক্ষিণ মালদায় জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরী। তবে ব্যবধান ছিল মাত্র ১০ হাজার। এখানে সিপিএমের এক নেতার দাবি, দক্ষিণ মালদায় জোট না হলে ওই আসনেও হারতে হত কংগ্রেসকে। সেক্ষেত্রে আবু হাসেম খান চৌধুরী পরাজিত হতেন। তাহলে কীভাবে হাসেম খান চৌধুরী এই ধরনের মন্তব্য করছেন!
জানা গিয়েছে, সোমবার বৈষ্ণবনগর বিধানসভাকেন্দ্রে দলীয় কার্যালযে একটি কর্মীসভা করেন আবু হাসেম খান চৌধুরী। ওই সভাতে তিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজিত প্রার্থী আজিজুল হককে প্রার্থী করার ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানান। এই ঘোষণার উত্থাপন করতে গিয়ে তিনি বলেন, সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে চাইছে। কিন্তু মালদায় সিপিএমের তেমন কিছু নেই। আমরা কেন আসন ছাড়ব সিপিএমকে। সোমবার রাত থেকে এই ভিডিও মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। যা হাতে আসতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সিপিএম নেতারা।
এপ্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, যেহেতু জোটের বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্ব দেখছেন, তাই আমি এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। আমি ভিডিওটি রাজ্য নেতাদের পাঠিয়ে দিয়েছি। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং যা বলার তা রাজ্য নেতারাই বলবেন।
যদিও সিপিএমের প্রবীণ নেতা বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, আমাদের মূল শত্রু বিজেপি ও তণমূল। রাজ্য থেকে তণমূলকে সরিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার গড়ার প্রশ্নে যখন বাম-কংগ্রেসের মধ্যে একটা আলোচনা চলছে, তখন আবু হাসেম খান চৌধুরীর এই মন্তব্য অত্যন্ত নক্ক্যারজনক। আমি মনে করি তাঁর এই মন্তব্যে বিরোধী বিজেপি ও তণমূলের শক্তি বৃদ্ধি করবে। করোনা পরিস্থিতিতে মালদায় দেখা গিয়েছে, কংগ্রেস নয়, সাধারণ মানুষের পাশে ময়দানে নেমে দাঁড়িয়েছে লাল ঝান্ডাই। আমি দাবি করছি, আবু হাসেম খান তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চান।