শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি : উদ্বোধন হয়েছিল ঘটা করে। বলা হয়েছিল উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি করে মুনাফাও হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে বাস্তবায়নের আগেই মুখ থুবড়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রায় ১০ কোটির সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রশ্ন উঠেছে কাজের মান নিয়ে।
বিকল্প শক্তির উৎস হিসাবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিল দপ্তর। তবে প্রকল্প চালু হওয়া দূরের কথা, চার বছর আগে শুরু হওয়া কাজ মাঝপথেই থমকে গিয়েছে। আজ পর্যন্ত বিল্ডিংয়ের ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর কাজই শেষ হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক, শিক্ষকদের অভিযোগ, সোলার প্যানেল বসাতে গিয়ে প্রশাসনিক ভবন সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদ ফুটো করে বা ফাটিয়ে কাজ করা হয়েছে। তার ফলে বৃষ্টি হলেই ছাদ চুইয়ে জল পড়ছে ঘরে। তাতে প্রশাসনিক কাজকর্ম যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনই ক্লাসেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে। ইতিমধ্যে পরপর চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বিষয়টি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরে জানানো হলেও প্রয়জনীয় পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ দ্রুত মেরামত করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে সম্প্রতি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের ফের চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের কারিগরি বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে ছাদের যা পরিস্থিতি তাতে কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে সেই ছাদ মেরামতির কাজ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। পরিস্থিতি এমন যে, ছাদে ভারী কাজ করতে গেলে পুরো বিল্ডিং ধসে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আদৌ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তাঁর কথায়, ওই সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। টেকনিকাল কিছু সমস্যা আছে। কাজ করতে গিয়ে ছাদের খানিকটা ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দাবি, তাদের ছাদ নতুন করে তৈরি করে দিতে হবে। তবে ওদের বিল্ডিংগুলি অনেক পুরোনো। তাই নতুন করে ছাদ তৈরি করতে গেলে বড় বিপদ হতে পারে। তবুও বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিয়ে কীভাবে সমাধানের উপায় বের করা যায় সেটা আমরা ভেবে দেখছি।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮-২০১৯ আর্থিক বর্ষে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ গুন বলেন, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে প্রায় প্রতিটি বিল্ডিংয়ে ছাদই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সবটাই লিখিতভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরে জানিয়েছি। আমাদের তরফে কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক মেরামত করা হয়েছে। তবে সমস্যা মেটেনি।
ছাদ দিয়ে জল পড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরাও। কয়েকদিন আগে ভূগোল বিভাগের পড়ুয়ারা সমস্যা মেটানোর দাবিতে বিক্ষোভও দেখান। বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি বিভাগের আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, ছাদ ফাটিয়ে বা ফুটো করে কাজের সময়ই সমস্যা তৈরি হবে বলে তাঁরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের ঠিকাদারদের জানিয়েছিলেন। ছাদের উপর আলাদা নির্মাণ করে তার উপর সোলার প্যানেল বসানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেকথা শোনা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিল্ডিংগুলো অনেক পুরোনো জেনেও কেন সেগুলো ফাটিয়ে কাজ হল তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
ক্যাম্পাসের ভেঙে পড়া সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্যও কয়েক বছর আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরে প্রকল্প জমা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেই কাজে আজ পর্যন্ত আর্থিক বরাদ্দ মেলেনি। ফলে দপ্তরের কাজ নিয়ে সন্দিহান বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একটা বড় অংশ। যদিও সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা দিলে তাঁরা কাজ করে দেবেন।